সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্কের দেওয়া ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেখানে দাবি করা হয়, ভলকার তুর্ক এ কথা বলেছেন।
তবে এমন কোনো বার্তা দেননি জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক। তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে উঠে আসে এ তথ্য।
সংস্থাটির অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না’ বলে কোনো বক্তব্য দেননি। এমনকি জাতিসংঘও এমন কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সাম্প্রতিক সভায় তুর্ক বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিষিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টিকারী আইন সংশোধন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তার বক্তব্যকেই বিকৃত করে আলোচিত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়।
ভাইরাল হওয়া সে শিরোনামটি ছিল—‘এবার আন্তর্জাতিক খেলা শুরু। আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। জাতিসংঘের অফিসিয়াল বার্তা। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ।’
আলোচিত ভাইরাল ভিডিওর তদন্তে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে রয়টার্সের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৬ জুন প্রকাশিত ‘LIVE: U.N. human rights council meeting starts in Geneva’ শীর্ষক শিরোনামে ভিডিও পাওয়া গেছে। এই ভিডিওর ১২ মিনিট ১৪ সেকেন্ড থেকে ৫২ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশের সঙ্গে ভাইরাল দাবির ভিডিওর মিল রয়েছে, যা বক্তব্য বিকৃতির প্রমাণ দেয়।
এ ছাড়া, জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সভার বিষয়ে একাধিক (এক, দুই) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হতে দেখা যায়।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমি অনুপ্রাণিত বোধ করছি যে, অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপের মাধ্যমে অগ্রগতি অর্জন করছে। সংস্কার, অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে অর্থবহভাবে এগিয়ে যেতে আমি আহ্বান জানিয়েছি। অবশ্য রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিষিদ্ধের সুযোগ তৈরি করে সম্প্রতি আইনে পরিবর্তন আনা এবং এ সংক্রান্ত সব কর্মকাণ্ড নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। এটা সংগঠনের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সমাবেশের স্বাধীনতা সীমিত করবে।
অর্থাৎ, গত ১৬ জুন জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫৯তম অধিবেশনে হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক তার বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিষিদ্ধ করার সুযোগ তৈরি করতে আইন সংশোধনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ভলকার তুর্কের ওই বক্তব্যে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিষয়ে উদ্বেগ দেখা গেলেও ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না’ শীর্ষক বক্তব্য দেওয়ার কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
চলতি বছরের ১২ মে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করে; যা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তি বা সংগঠন নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে। এই অধ্যাদেশের আলোকে আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়। তবে, ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না’ দাবি করে জাতিসংঘের নামে প্রচারিত বার্তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।