Blog

  • নিজ বাসা থেকে ‘হিজড়া লিডারের’ গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার

    নিজ বাসা থেকে ‘হিজড়া লিডারের’ গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার

    রাঙামাটি কাউখালীতে তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া শিলাকে জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের নিজ বাসা থেকে তার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

    হিজড়া শিলার বাবার বাড়ি চট্টগ্রাম হাটহাজারীতে বলে জানা গেছে।

    স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিলা তৃতীয় লিঙ্গের হওয়াতে চট্টগ্রাম হাটহাজারী বাবার বাড়ি হওয়ার পরও নিজ বাড়িতে থাকতেন না। দীর্ঘ অনেক বছর ধরে কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নে বসবাস করতেন। শিলা উপজেলার তৃতীয় লিঙ্গের লিডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে টাকা উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে গত চার বছর আগে আগে শিলা সার্জারি করে শারীরিক পরিবর্তন ঘটানোর পর থেকে তিনি আরেক হিজড়াকে টাকা উত্তোলনের দায়িত্ব দিয়ে বিভিন্ন রকম স্টেজ শো করতেন বলে জানা যায়।

    স্থানীয় সূত্র থেকে আরও জানা যায়, শিলা সার্জারি করে শারীরিক পরিবর্তন করানোর পর স্থানীয় এক ছেলেকে বিয়ে করেন। কিন্তু ছেলেটি মাদকাসক্ত হওয়াতে বনিবনা না হওয়ায় সেটি ডিভোর্সের জন্য আদালত অবধি গড়ায়। এরপর থেকে মাঝে মাঝে সেই স্বামী তার বাসায় আসতেন।

    গত রবিবার রাতে অপরিচিত ৫ লোককে বাসায় ঢুকতে দেখেন স্থানীয়রা। তবে তারা কখন বের হয়েছেন, সেটা কেউ দেখেনি। সোমবার বিকালে শিলার বাড়ির পাশে থাকা আরেক হিজড়া তার কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে সবাইকে খবর দেয়। এরপর সবাই দরজা খুলে দেখতে পায় বিছানায় শিলার গলাকাটা মরদেহ পড়ে আছে। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।

    কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘শিলা নামে এক তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ব্যক্তির গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে কাউখালী থানা পুলিশ। প্রাথমিকভাবে এটি একটি হত্যাকাণ্ড মনে হচ্ছে। আমরা বেশকিছু আলামত জব্দ করেছি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, রবিবার রাতে হিজড়া শিলার বাসাতে মাদকের আড্ডা হচ্ছিল। প্রাথমিক তদন্ত ও আইনি কাজ শেষে তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে।’

  • লিবিয়ায় নিহত ২৩ জনের ১০ জনই মাদারীপুরের

    লিবিয়ায় নিহত ২৩ জনের ১০ জনই মাদারীপুরের

    অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় নৌকাডুবিতে নিহত ২৩ জনের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় মিলেছে। তাদের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। নিহতদের পরিচয় পাওয়ার পর থেকেই তাদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এ ঘটনায় জড়িত দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

    পুলিশ বলছে, এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

    জানা গেছে, দালালদের খপ্পরে পড়ে গত ১ জানুয়ারি ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন রাজৈর পৌরসভার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের চা বিক্রেতা হাসান হাওলাদারের ছেলে টিটু হাওলাদার। তাঁর সঙ্গে মামা গোবিন্দপুরের বাসিন্দা আবুল বাশার আকনও যোগ দেন।

    ২৪ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রা করেন তাঁরা। মাঝপথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান দুজন। গতকাল সকালে মৃত্যুর খবর এলে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। নিহত অন্যরা হলেন রাজৈর উপজেলার গোবিন্দপুরের ইনসান শেখ, শাখারপারের সজীব মোল্লা, সাদবাড়িয়ার রাজীব, সুন্দিকুড়ির সাগর বিশ্বাস, আশিস কীর্তনিয়া, সাগর বাড়ৈ ও বৌলগ্রামের অনুপ সরদার।

    এ ঘটনায় রাজৈরের ১০ জনসহ ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করে লিবিয়ার কোস্টগার্ড। ভিটেমাটি বিক্রির পাশাপাশি চড়া সুদে লাখ লাখ টাকা এনে দালালদের হাতে তুলে দিলেও শেষরক্ষা হয়নি। এ ঘটনার মূলহোতা রাজৈরের হরিদাসদি গ্রামের স্বপন মাতুব্বর, মজুমদারকান্দির মনির হাওলাদার ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলীপুরের রফিক দালাল। তাঁদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পাশাপাশি লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তাঁরা।

    টিটু হাওলাদারের বাবা হাসান হাওলাদার বলেন, ‘আমি সামান্য চা দোকানি। আমাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ছেলেকে ইতালি নেওয়ার জন্য টাকা নেয়। এখন শুনি ছেলে মারা গেছে। আমি দালালের বিচার চাই।’

    আবুল বাশার আকনের ভাই বাচ্চু আকন বলেন, ‘দালালরে টাকা দিয়ে আমরা সর্বস্বান্ত। এখন আমার ভাইয়ের লাশ চাই।’ রাজৈর থানার ওসি মাসুদ খান বলেন, ‘দালালদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেওয়া হবে।

  • আবাসিক হোটেল থেকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির মরদেহ উদ্ধার

    আবাসিক হোটেল থেকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির মরদেহ উদ্ধার

    চাঁদপুর শহরের বিপনীবাগ বাজার সংলগ্ন ‘নিউ রুপসী চাঁদপুর’ আবাসিক হোটেল থেকে মো. রুবেল হাসান রাফি (২৮) নামে এক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ওই বাজার সংলগ্ন পুরাতন পৌর মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় হোটেলের ৯ নম্বর কক্ষ থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে সদর মডেল থানা পুলিশ।

    পুলিশ জানিয়েছে, চিকিৎসক পরিচয়ে রবিউল ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় হোটেলের ৯ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেন। তবে সেখানে তার প্রকৃত পরিচয় গোপন রাখে। হোটেলে তার নাম পরিচয় দেন মোহাম্মদ আরিফুল হক (২৭)। বাবার নামে দেন শাহজালাল। ঠিকানা লিখেন নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার কাচারী বাজার। মূলত তার নাম মো. রুবেল হাসান রাফি (২৮)। বাবা আবু বক্কর। ঠিকানা চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেঙ্গারচর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আদুরভিটি গ্রাম।

    নিহত রুবেল হাসান রাফির বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম জানান, গ্লোব ফার্মাসিটিক্যালসে মতলব উত্তরে কর্মরত ছিল রুবেল। ১ ফেব্রুয়ারি সকালে অফিসের ট্রেনিংয়ে যোগ দিতে নোয়াখালী উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এরপর ফোনে জানতে পারি চাঁদপুরের একটি হোটেলে তার লাশ পাওয়া গেছে।

    পুলিশ জানায়, রোববার দুপুরে হোটেল কর্তৃপক্ষ এক কক্ষে ঝুলন্ত মরদেহ দেখে থানায় খবর দেয়ে। বিকেলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। রুবেল গ্লোব ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি ছিলেন।

    চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

  • হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসককে পেটালেন যুবদল নেতা

    হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসককে পেটালেন যুবদল নেতা

    হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসককে পেটালেন যুবদল নেতা
    চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেকিকেল অফিসার ডা. জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাসের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে পৌর যুবদলের নেতা ইকতার রহমানের বিরুদ্ধে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

    জানা গেছে, একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হিসাব-নিকাশকে কেন্দ্র করে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে বিষয়টি ইতোমধ্যেই এই যুবদলের পক্ষ থেকে মীমাংসা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করা হয়েছে।

    চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত ১১টার দিকে স্থানীয় পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টাফ কোয়ার্টারে ফিরছিলেন তিনি। রাত ১১টা ৩৭ মিনিটে হাসপাতাল চত্ত্বরে পৌঁছালে জীবননগর পৌর যুবদলের ১ নম্বর সদস্য ইকতার রহমান গালিগালাজ করেন এবং তার কাছে থাকা টর্চলাইট দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করেন। এতে মুখে রক্তজমাট বেধে ও ফুলে আহত হন তিনি। অভিযুক্ত ইকতার হোসেন চলে গেলে আমি বাড়িতে যাই এবং চিকিৎসা নিই।

    আরও পড়ুনঃ বাসের সিট ধরা নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ
    কি কারণে হামলা হলো জানতে চাইলে ডা. জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইকতার হোসেন মারধরের আগে আমাকে বলেন তুই আগে আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা করছিস। এখন বিএনপি করিস। উত্তরে জানাই, আমি একজন সরকারি চাকরিজীবী। কোনোভাবেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারি না। এরপরই তিনি আমাকে মারধর করতে শুরু করেন।

    স্থানীয় পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পার্টনার নেওয়া নিয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে কি না জানতে চাইলে বলেন, গতকাল শনিবার রাতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পার্টনার নেওয়া নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে হিসাব-নিকাশে বসেছিলাম। প্রতিষ্ঠানের মালিক ডাবলুর সঙ্গে ইকতার হোসেনের ভালো সম্পর্ক। তার সঙ্গেই থাকেন। গতকাল হিসাব-নিকেশ করার সময় তাকে না ডাকার কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তবে হামলার মূল কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা যে ব্যবস্থা নেবেন আমি মেনে নেব।

    আরও পড়ুনঃ ৬ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
    এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত জীবননগর পৌর যুবদল নেতা ইকতার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডা. জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটনাটি ঘটিয়ে ফেলেছি। আমি ভুক্তভোগী চিকিৎসকের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।

    তিনি আরও বলেন, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আমার কোনো শেয়ার নেই। ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। গতকাল প্রতিষ্ঠানের হিসাব-নিকাশ চলছিল। আমি জানতাম না। পরে জিজ্ঞাসা করলে চিকিৎসক জাহাঙ্গীর বলেন, তুমি চলে আসতে পারতে। এ নিয়ে মূলত এই ঘটনাটি ঘটেছে।

    জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মকবুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যক্তিগত কারণে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এটি দুংখজনক। হাসপাতালের চত্ত্বরে এই ঘটনা ঘটেছে। উভয়পক্ষ বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জেনেছি।

    আরও পড়ুনঃ দোয়া চাইলেন সারজিস আলমের শ্বশুর
    রোববার রাতে জীবননগর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মামুন হোসেন বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ঘটনাটি জেনেছি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী চিকিৎসকে মামলা করার জন্য বলেছি। এখন পর্যন্ত মামলা বা অভিযোগ দেননি।

    চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যক্তিগত কারণে হলেও হাসপাতালের এরিয়ার মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়টি জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন। ভুক্তভোগী ওই চিকিৎসককে জীবননগর থানায় একটি অভিযোগ করতে বলা হয়েছে।

  • কমিটিতে বিএনপি নেতার ছেলের নাম না দেওয়ায় প্রধান শিক্ষককে মারধর

    কমিটিতে বিএনপি নেতার ছেলের নাম না দেওয়ায় প্রধান শিক্ষককে মারধর

    নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটিতে বিএনপি নেতার ছেলের নাম প্রস্তাব না পাঠানোয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে মারধর করেছেন ওই নেতা।

    রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের পণ্ডিতের হাটে এ ঘটনা ঘটে।

    মারধরের শিকার এ এন এন ইয়াছিন পশ্চিম চরকাঁকড়া পণ্ডিতের হাট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ঘটনার পর খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা পণ্ডিতের হাটে সড়ক অবরোধ করে। পরে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা থানা-পুলিশের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা শান্ত হয় এবং তারা বিদ্যালয়ে ফিরে যায়।

    অভিযুক্ত বিএনপি মো. রেজাউল হক কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও একই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য। এছাড়া তিনি পণ্ডিতের হাটের একটি ওষুধের দোকানের মালিক এবং পল্লী চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত।

    হামলার শিকার প্রধান শিক্ষক এ‌ এন এন ইয়াছিন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারের নির্দেশে কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষা বোর্ড থেকে নির্দেশ আসে ছয় মাসের জন্য তিন সদস্যের একটি অ্যাডহক কমিটি গঠনের। এ জন্য তিনজনের একটি প্যানেল তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী আমি তিনজন ব্যক্তির নাম চূড়ান্ত করি।

    প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, কয়েক দিন আগে বিএনপি নেতা রেজাউল হক তার ছেলের নাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করেন। আমাকে কাগজপত্র জমা দিতে বলেন। তখন রেজাউল তার ছেলের কাগজপত্র বিদ্যালয়ে জমা দিয়ে যান। কিন্তু রেজাউলের ছেলের বয়স কম হওয়ায় তার নাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়নি।

    এ‌ এন এন ইয়াছিন অভিযোগ করে বলেন, অ্যাডহক কমিটিতে ছেলের নামের প্রস্তাব না পাঠানোর বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন বিএনপি নেতা রেজাউল হক। রোববার বেলা ১১টার দিকে একটি জরুরি কাজে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে পণ্ডিতের হাটে নিজ দোকানের সামনে আমার ওপর হামলা চালান। তখন সঙ্গে থাকা বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক আমাকে রক্ষা করেন।

    এদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। তারা হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে দুপুর ১২টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ-পণ্ডিতের হাট সড়ক অবরোধ করে। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এ সময় প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলাকারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে খবর পেয়ে সেখানে কোম্পানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাহিদ হোসেন আসেন। তখন পুলিশের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা রেজাউল হক প্রকাশ্যে শিক্ষকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে রেহাই পান। শিক্ষার্থীরা এ সময় রেজাউল হকের ওষুধের দোকান ভাঙচুর করে এবং তাকে দোকানের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখে।

    অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রেজাউল হক দাবি করেন, প্রধান শিক্ষককে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে একটু গালমন্দ করেছি। তাই আমি অনুতপ্ত হয়েছি। আমার দোকানে ভাঙচুর হয়েছে। এছাড়া আমার কথার ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। যা দুঃখজনক।

    পাল্টা অভিযোগ করে রেজাউল হক বলেন, আমি ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিতে ১৪ বছর ধরে নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার ছেলে মাস্টার্স পাস। আর প্রস্তাব পাঠানো তিনজন ডিগ্রি পাস। প্রধান শিক্ষক অন্য আরেকজনের সঙ্গে চক্রান্ত করে তাদের পছন্দের লোকজনের তালিকা পাঠান। আমি বিষয়টি জানার পর প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করেছি কেবল। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।

    ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী কোম্পানীগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) নাহিদ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে স্থানীয় এক ব্যক্তি প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা চালান। ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। পরে আমি গিয়ে তাদের বুঝিয়ে শান্ত করি। অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ায় বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়। এ কারণে ওই শিক্ষক আর থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি।

  • ফরিদপুরে সব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করল জামায়াত

    ফরিদপুরে সব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করল জামায়াত

    ফরিদপুরে সব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করল জামায়াত
    গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো ঠিক না হলেও ফরিদপুরের চারটি সংসদীয় আসনেরই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

    রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ফরিদপুর জেলা জামায়াতের আমির মো. বদরউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

    তিনি বলেন, ফরিদপুরের চারটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

    ‘যৌথবাহিনীর হাতে যুবদল নেতা খুন, এটা ভালো লক্ষণ নয়’
    ফরিদপুরের নয়টি উপজেলা নিয়ে চারটি সংসদীয় আসন। এরমধ্যে আলফাডাঙ্গা-বোয়ালমারী-মধুখালী এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত (ফরিদপুর-১) আসন। এই আসনে ঢাকা জেলা শাখার সুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য ইলিয়াছ মোল্লাকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান। তার বাড়ি মধুখালী উপজেলার কামালদিয়া ইউনিয়নের কালপোহা গ্রামে।

    নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-২ আসন গঠিত। সেখানে নগরকান্দা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সোহরাব হোসেনকে প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি নগরকান্দার তালমা নাজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি তালমা গ্রামে । তিনি এর আগে নগরকান্দা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে হেরেছিলেন।

    ফরিদপুর সদর উপজেলা নিয়ে নিয়ে গঠিত (ফরিদপুর-৩) আসন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় সুরা সদস্য ও ফরিদপুর অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক আব্দুত তাওয়াব এই আসনে প্রার্থী করা হয়েছে । তিনি বোয়ালমারী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। ফরিদপুর শহরের লক্ষ্মীপুর মহল্লা এলাকার বাসিন্দা। আব্দুত তাওয়াব ২০১৪ সালে সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

    ভাংগা, সদরপুর ও চরভ্রদাসন উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসন গঠিত। এই আসনে ভাংগা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সরোয়ার হোসেনকে জামায়াতের প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি ভাংগা উপজেলার পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। তার বাড়ি ভাংগার মালিগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচকুল গ্রামে। তিনি তারাইল আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক।

  • ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি, লক্ষ্য শতাধিক তরুণ নেতা তৈরি।

    ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি, লক্ষ্য শতাধিক তরুণ নেতা তৈরি।

    গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতন ঘটানোর পর নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষার্থী ও তরুণেরা। চলতি মাসের মাঝামাঝি এ দলের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। দল গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের লক্ষ্য প্রাথমিকভাবে ১০০টি আসনে তরুণ নেতা তুলে আনা। এ লক্ষ্য পূরণে নতুন রাজনৈতিক দলে থাকবেন এমন নেতারা স্থানীয় পর্যায়ে নিয়মিত যাচ্ছেন এবং সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে স্থানীয় তরুণ ও যুবসমাজকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন।

    গণ-অভ্যুত্থানের পরপরই নতুন দল গঠনে কাজ শুরু করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। নাগরিক কমিটির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন দলের নাম, গঠনতন্ত্র, নেতৃত্ব নিয়ে শেষ মুহূর্তের আলোচনা চলছে এখন। প্রাথমিকভাবে দলের শতাধিক নামের প্রস্তাব পেলেও সেই তালিকা সংক্ষিপ্ত করে এনেছেন তাঁরা। গঠনতন্ত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রেও অনেক দূর এগিয়েছেন। নেতৃত্ব নিয়ে নানা আলোচনা থাকলেও নাহিদ ইসলামকে দলের মূল নেতৃত্বে দেখা যেতে পারে।

    নাগরিক কমিটির একাধিক নির্বাহী সদস্য আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, দলের নাম, গঠনতন্ত্র, নেতৃত্ব চূড়ান্ত করে চলতি মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহের মাঝামাঝি দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটবে। ১৪ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের নতুন দল আত্মপ্রকাশের ভাবনা রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। একই সঙ্গে শুক্রবার হওয়ায় এদিনে দেশব্যাপী লংমার্চের মধ্য দিয়ে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে।

    নতুন দলের ভিত্তি শক্তিশালী করতে আসনভিত্তিক প্রস্তুতিও চলছে। নাগরিক কমিটির একাধিক সূত্র বলছে, সদস্যসচিব আখতার হোসেন কাউনিয়া উপজেলা, হারাগাছ পৌরসভা ও পীরগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৪ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ উপলক্ষে তিনি নিয়মিত এই আসনে যাচ্ছেন এবং স্থানীয় সামাজিক, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। অন্যদিকে নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রায়ই কুমিল্লায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। কুমিল্লা-৪ আসন থেকে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠন আব্দুল হান্নান মাসুদ। নোয়াখালী-৬ আসনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি চলছে তাঁর।

    এ ছাড়াও জাতীয় নাগরিক কমিটি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুহাম্মদ হাসান আলী চট্টগ্রামে, মো. আব্দুল আহাদ দিনাজপুরে, আশরাফ উদ্দিন মাহদি ও মো. আতাউল্লাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, অনিক রায় সুনামগঞ্জে, মনিরা শারমিন নওগাঁয়, এস এম সাইফ মোস্তাফিজ সিরাজগঞ্জে, আতিক মুজাহিদ কুড়িগ্রামে, আবদুল্লাহ আল আমিন নারায়ণগঞ্জে, সারোয়ার তুষার নরসিংদীতে, মশিউর রহমান ঝালকাঠিতে, মো. নিজাম উদ্দিন নোয়াখালীতে এবং আলী আহসান জোনায়েদ ঢাকায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় সংগঠক মেসবাহ কামাল মুন্না খুলনায়, প্রীতম দাশ হবিগঞ্জে, আবু সাঈদ লিওন নীলফামারীতে এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির নারীবিষয়ক সেলের প্রধান সাদিয়া ফারজানা দীনা রংপুরে নির্বাচনের লক্ষ্যে তরুণ ও যুবসমাজকে সংগঠিত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

    জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সারোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে চাই। সে প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি এবং সেভাবেই আগাচ্ছি।’

    স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় পর্যায়ে ১০০ তরুণ নেতা, এমন মডেল নিয়ে আগাচ্ছি। এর সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে আরও নেতৃত্ব উঠে আসবে। এ প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ চলছে।’

    নাহিদ ইসলাম বা সরকারের কোনো উপদেষ্টার নতুন দলে যোগদানের বিষয়ে সারোয়ার তুষার বলেন, ‘দল ফেব্রুয়ারিতে আসছে এটা চূড়ান্ত। সরকারের মধ্য থেকে যদি কেউ আসতে চান, তাহলে সরকারের পদ ছেড়ে দিয়ে আসতে হবে। আমাদের এখনো কেউ নিশ্চিত করেননি যে, তাঁরা আসবেনই।’

  • হাসিনার দুর্নীতি তদন্তে বাধা

    হাসিনার দুর্নীতি তদন্তে বাধা

    ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার দুর্নীতি তদন্তে পদে পদে বাধা আসছে। তার পরিবার, স্বজন, অনুগত সামরিক-বেসামরিক আমলা ও হাসিনার মাফিয়াতন্ত্রে অর্থের জোগানদাতা অলিগার্কদের দুর্নীতি তদন্তে বাধা আসতে শুরু করেছে নানা কোণ থেকে। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ঘাটে ঘাটে সৃষ্টি করা হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা।

    সুকৌশলে দুদক যাতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে রণেভঙ্গ দেয় সে লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র চলছে ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন ভেঙে দেয়ারও। লক্ষ্য হাসিলে দিল্লিদাসী হাসিনার দীর্ঘ মাফিয়াতন্ত্রের সহযোগী, অলিগার্করা গঠন করেছেন অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল। লুণ্ঠিত ও পাচার হওয়া অর্থ দিয়ে গঠন করা হয়েছে এ তহবিল। তহবিলের অর্থ ব্যবহৃত হবে সরকারের ভেতর থেকে অস্থিরতা সৃষ্টি, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, বিদ্যমান কমিশন ভেঙে দেয়া এবং দুর্নীতির বিচারকে অনিশ্চিত করে তোলা। আর এসব কাজের বরকন্দাজি করছেন সরকারের ভেতরে ওঁৎপেতে থাকা প্রভাবশালী আমলা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তার পদ আঁকড়ে থাকা অবসরপ্রাপ্ত (হাসিনার আমলে সুবিধাভোগী) সামরিক কর্মকর্তা, পুলিশ, বিচারপতি ও বিচারক। ‘প্রকল্প’ বাস্তবায়নে ‘মিডিয়া পার্টনার’ হিসেবে রয়েছে ১০ অলিগার্কের নিয়ন্ত্রণাধীন সংবাদ মাধ্যম। তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের।

    সূত্রটি জানায়, শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য, সহযোগী দুর্নীতিবাজ সামরিক-বেসামরিক আমলাদের যাতে সহসাই বিচারের মুখোমুখি করা না যায় সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে শুরু হয়েছে অসহযোগিতা। দুদকের তদন্ত টিমে কাজ করছেন এমন একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, হাসিনা, পরিবার সদস্য, স্বজন এবং চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ব্যাংক লুটেরাদের দুর্নীতির অনেক আলামতই এর মধ্যে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের চার মাস পর পুনর্গঠিত হয় দুদক। লম্বা সময় পেয়ে অনেক আলামত ধ্বংস করে ফেলা হয়। দেড় দশকের দুর্নীতির আলামত গায়েব করে দেয়া হয়। ফলে অনুসন্ধান ও তদন্তের প্রয়োজনে রেকর্ডপত্র চাওয়া হলে সহসাই মিলছে না সেই রেকর্ড। নানা ছুতোয় গড়িমসি করছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর ফলে অনুসন্ধান এবং তদন্তের বিধিবদ্ধ যে সময়সীমা রয়েছে, এর মধ্যে সম্পন্ন করা যাচ্ছে না অনুসন্ধান। আবেদন দিয়ে কমিশনের কাছ থেকে সময় চাইতে হচ্ছে। রেকর্ডপত্র চেয়ে একবার রিকুইজিশন দিলে নথি আসছে না। চিঠি দিতে হচ্ছে একাধিকবার চিঠি। অর্থাৎ সময়ক্ষেপণের একটি কৌশল সুস্পষ্টতই লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে অনুসন্ধান এবং চার্জশিট দাখিল নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

    দুদক সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার আট মেগা প্রকল্পে অন্তত ২১ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হয় গত ডিসেম্বর। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পৃথক অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। ৯ প্রকল্পে হাসিনা এবং তার পরিবারের দুর্নীতির আপাত অর্থমূল্য ৮০ হাজার কোটি টাকা। ইভিএম ক্রয় প্রকল্পেও আত্মসাত হয়েছে চার হাজার কোটি টাকা। এটির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। বিদ্যুৎ বিভাগে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতেরও অনুসন্ধান চলছে। দেড় দশকের সরকারি কেনাকাটায় যে দুর্নীতি হয়েছে সেগুলোতে এখনো হাতই দেয়া হয়নি। সঙ্গত কারণেই এসব দুর্নীতির অনুসন্ধান-তদন্তে বেরিয়ে আসছে হাসিনার উচ্ছিষ্টভোগী সামরিক-বেসামরিক আমলা, প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও অলিগার্কদের সংশ্লিষ্টতা।

    এর মধ্যে হাসিনা এবং তার পরিবার-স্বজনের বিরুদ্ধে পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দুর্নীতির একাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল, রাদওয়ান মুজিব ববিসহ রাজউক ও গণপূর্ত বিভাগের অন্তত ৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। হাসিনা রেজিমে দেশ ও জাতি গঠনে ‘অসামান্য অবদান রাখা’র কোটায় ৮৩০টি প্লট ভাগবাঁটোয়ারা হয়েছে হাসিনার সোহবতে থাকা আয়া-বুয়া-ড্রাইভার-অফিস সহায়কদের নামে। এসব অবৈধ বরাদ্দের অভিযোগও অনুসন্ধান চলছে।

    গত ২৭ জানুয়ারি বিমান বন্দর সম্প্রসারণের নামে ৮১২ কোটি টাকা লোপাটের দায়ে মামলা করে দুদক। এতে হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকীসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়। দুদকের পৃথক তদন্ত টিম মামলাগুলোর তদন্ত করছে। তদন্ত কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, শেখ হাসিনা, পরিবারের সদস্য-স্বজনদের দুর্নীতি তদন্তে বেরিয়ে আসবে আরো অনেক সহযোগী সামরিক-বেসরমারিক কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা। কারণ, কোনো দুর্নীতিই হাসিনার পক্ষে এককভাবে করা সম্ভব হয়নি। তার নেকনজরে থাকা পদস্থ কর্মকর্তারাই ছিলেন এসব দুর্নীতির স্টেকহোল্ডার। হাসিনার দুর্নীতি প্রমাণে টানতে হচ্ছে সহযোগীদের নথি। আর এতেই যেন আঁতে ঘা লেগেছে সংশ্লিষ্টদের। মামলা হয়েছে আমলাদের বিরুদ্ধে। অথচ ঠাঁকুর ঘরে বসে ‘কলা না খাওয়া’র দাবি করছেন দুর্নীতিপ্রবণ প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। হাসিনার দুর্নীতি ধরে টান পড়তেই বেচইন হয়ে পড়েছেন ঠাঁকুরঘরের বাসিন্দারা। দুর্নীতি মামলার আসামি সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে প্রকারান্তে এটিই বলার চেষ্টা চলছে যে, শেখ হাসিনা কোনো দুর্নীতি করেননি! যারা হাসিনার দুর্নীতির অংশীদার তারাও কোনো অপরাধী নন!

    গত ১৬ জানুয়ারি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) দুদকে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠির ‘বিষয়’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছেÑ ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়েরকৃত মামলায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউক কর্মকর্তাদের নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে পুনর্বিবেচনা প্রসঙ্গে।’ দুই পৃষ্ঠার এ চিঠিতে ১৯৫৬ সালের ‘দ্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট’, ১৯৬৯ সালের রাজউকের প্লট বরাদ্দ নীতিমালা, ১৯৭৯ সালের ‘সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা’, ২০১৩ সালের ‘রাজউক (কর্মকর্তা-কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা’ এবং ২০১৮ সালে প্রণীত রাজউকের ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার রেফারেন্স টানা হয়েছে। বলা হয়Ñ শেখ হাসিনা ওতার পরিবারের ছয় সদস্যের অনুকূলে রাজউক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা আয়তনের ছয়টি প্লট সরকারের আইন ও বিধি মোতাবেক সরকারের লিখিত আদেশে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বর্ণিত ছয়টি প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে রাজউক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তথা সরকারের আদেশ পালন করেছে মাত্র।

    আরো বলা হয়, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়েরকৃত মামলায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউক’-এর নাম শামিল করা হয়েছে। কিন্তু গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের ওই কর্মকর্তাদের উপরে উল্লিখিত আইন ও বিধির আলোকে বর্ণিত প্লটসমূহ বরাদ্দ প্রদানের কাজ সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। সরকারের আদেশ মোতাবেক কাজ সম্পন্ন না করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বর্ণিত আইন ও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো। সুতরাং, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের কর্মকর্তারা যেহেতু ওই আইন ও বিধি বহির্র্ভূত কাজ করেনি, সেহেতু তাদের নাম মামলা সংযুক্ত করা সমীচীন হয়নি-মর্মে প্রতীয়মান হয়। বর্ণিতাবস্থায়, উপরোক্ত বিষয়সমূহ সদয় বিবেচনা-পূর্ব পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।’

    রাজউকের এ ধরনের চিঠি ধৃষ্টতা, নাকি অজ্ঞতাÑ সেটি আইনজ্ঞরাই বলবেন। ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪’ বলছে, এ ধরনের চিঠি আমলে নেয়ার কোনো এখতিয়ার কমিশনকে দেয়া হয়নি। আইনজ্ঞদের মতে, অনুসন্ধান-তদন্তে বাধা সৃষ্টি প্রশ্নে ‘দুদক আইন-২০০৪’ এর ১৯ ধারায় কমিশনকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদানের বিষয়টি বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। আইনটির ১৯ (২) ধারায় বলা হয়েছেÑ ‘কমিশন, যেকোনো ব্যক্তিকে অনুসন্ধান বা তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো তথ্য সরবরাহ করিবার জন্য নির্দেশ দিতে পারিবে এবং অনুরূপভাবে নির্দেশিত ব্যক্তি তাহার হেফাজতে রক্ষিত ওই তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবেন।’ ১৯(৩) ধারায় বলা হয়েছেÑ ‘কোনো কমিশনার বা কমিশন হইতে বৈধ ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তাকে উপধারা (১)-এর অধীন ক্ষমতা প্রয়োগে কোনো ব্যক্তি বাধা প্রদান করিলে বা ওই উপ-ধারার অধীন প্রদত্ত কোনো নির্দেশ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তি অমান্য করিলে উহা দ-নীয় অপরাধ হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনূর্ধ্ব তিন বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের কারাদ-ে বা অর্থদ-ে বা উভয় প্রকার দ-ে দ-নীয় হইবেন।’

    তদুপরি চিঠিতে উল্লিখিত তথ্যেও বিভ্রান্তি দৃশ্যমান। পূর্বাচলের প্লট কেলেঙ্কারির ঘটনায় হাসিনা, পরিবার সদস্য, স্বজনদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করেছে দুদক। আরো মামলা প্রক্রিয়াধীন। এজাহারগুলোর পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, মূল অভিযোগ-ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্লট বরাদ্দ দান। শেখ হাসিনা, পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের নামে বেআইনিভাবে প্লট বরাদ্দ দেন রাজউক কর্মকর্তারা। হাসিনা পরিবারের সদস্যসহ মামলায় মোট আসামি ৪৭ জন। আসামিদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ১৮৬০ এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/৪২০/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। হাসিনা পরিবারের সদস্যের বাইরে রাজউকের অন্তত ১০ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। তিনটি মামলায় রয়েছেন অভিন্ন আসামি। একটি মামলায়ও ডেসপাস রাইডার কিংবা পিয়ন পর্যায়ের কাউকে আসামি করা হয়নি। আসামির তালিকায় সর্বনি¤œ পদধারী ব্যক্তিটি হচ্ছেন উপ-পরিচালক। দুদকের অনুসন্ধান-তদন্ত হচ্ছে প্রমাণভিত্তিক। সাক্ষ্য ভিত্তিক নয়। পিয়ন-ডেসপাস রাইডারদের কোনো স্বাক্ষর ফাইল থাকে না। তাই তাদের আসামিও করা হয়নি। অথচ হাসিনা অনুগত মিডিয়াগুলো এই মর্মে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে যে, হাসিনার সহযোগী রাজউক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলায় অফিস সহায়ক, ডেসপাস রাইডারদেরেও আসামি করা হয়েছে। আর এতেই নাকি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা।

    রাজউকের আলোচিত এ চিঠিকে হাসিনা পরিবারের প্লট কেলেঙ্কারি ‘প্রমাণক সাক্ষ্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো. মঈদুল ইসলাম। তার মতে, রাজউক ও গণপূর্তের যেসব কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে তারা নিশ্চয়ই আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। কার নির্দেশনায়, কিভাবে তারা প্লটগুলো বরাদ্দ দিলেনÑ সেটি বেরিয়ে আসবে।

    তিনি বলেন, আসামির নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয় পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ আইনে নেই। ২০০৯ সালে আ.লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা’ বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের শত শত আবেদন দুদকে পড়েছিল। তৎকালীন কমিশন কিন্তু সেগুলো প্রত্যাহার করেনি। তবে তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত না হলে মামলা থেকে নিরপরাধ কর্মকর্তাদের নাম এমনিতেই বাদ যাবে। এ জন্য দরখাস্তের প্রয়োজন নেই।

    সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, রাজউক হচ্ছে প্লট অ্যালটমেন্ট অথরিটি। অ্যালটমেন্ট রুলসে দেশ ও জাতি গঠনে কেউ বিশেষ অবদান রাখলে এ ধরনের বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা আছে। যাদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তারা কারা? কী অবদান আছে তাদের দেশ-জাতি গঠনে? এসব বরাদ্দ-আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে তৎকালীন রাজউক কর্মকর্তারা কি কোনো আপত্তি তুলেছিলেন? তাহলে তারা এসব বরাদ্দের জন্য দায়ী হবেন না কেন?

    রাজউক চেয়ারম্যানের চিঠি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুদকের উচিত এই চিঠি প্রদানকারীকে ১৯(৩) ধারায় আইনে আওতায় আনা। তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। রাজউক যে জুজুর ভয় দেখাচ্ছে এর মধ্যে হাসিনা এবং তার সহযোগীদের সুরক্ষা দেয়ার মতলব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তদন্তে সহযোগিতার পরিবর্তে দুর্নীতিবাজ রক্ষার চেষ্টার মধ্য দিয়ে তিনি ক্রিমিনাল মিসকন্ডাক্ট করেছে। সাঈদ আহমেদ/ ১৩৭০

  • বাবার মৃত্যুর ১২ বছর পর একই স্থানে একইভাবে মারা গেলেন ছেলেও

    বাবার মৃত্যুর ১২ বছর পর একই স্থানে একইভাবে মারা গেলেন ছেলেও

    যশোরের অভয়নগরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সুজল সরকার নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার হরিশপুর গ্রামে ঘরের পিছনে বিদ্যুতের তার টানানোর সময় তিনি মারা যান।

    সুজল সরকার (২২) হরিশপুর গ্রামের প্রয়াত উজ্জ্বল সরকারের ছেলে। ২০১৩ সালে ঠিক একই জায়গায় বিদ্যুতের তার টানানোর সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান তিনিও।

    সুজল সরকারের কাকা কল্লোল সরকার বলেন, সুজল সরকারের বাড়ির পেছনের দিকে ছোট একটি মাছের ঘের আছে। ওই ঘেরে বোরো চাষের সেচের জন্য একটি বৈদ্যুতিক মিটার ছিল। ২০১৩ সালে বৈদ্যুতিক মিটার থেকে তার টেনে সেচযন্ত্রে সংযোগ দেওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তার বাবা উজ্জ্বল সরকার মারা যান। এরপর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে আবেদন করে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

    তিনি বলেন, সুজল ঘেরের মধ্যে বোরো ধান লাগিয়েছে। সেখানে সেচ দেওয়ার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে আবেদন করে পুনরায় একটি বৈদ্যুতিক মিটার পেয়েছে সে। ঘেরের অতিরিক্ত পানি সেচে বের করে দেওয়ার জন্য সুজল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সেচযন্ত্রে সংযোগের জন্য বিদ্যুতের তার টানছিল।

    একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে তিনি পাশের বিদ্যুতের আর্থিংয়ের তারের ওপর পড়ে যান। এতে সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

    অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. রকিবুল ইসলাম বলেন, দুপুর ১টা ১০ মিনিটে সুজল সরকারকে মৃত অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়।

    অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমাদুল করিম বলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সুজল সরকার মারা গেছেন। এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

  • এমপি থাকেন গোয়াল ঘরে!

    এমপি থাকেন গোয়াল ঘরে!

    চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনকষা ইউনিয়নের ৫৫ বছর বয়সী ভ্যানচালক মিস্টার আলী নিজে উপার্জিত সামান্য অর্থ দিয়ে গ্রামের রাস্তা মেরামত করছেন। সম্প্রতি, নিজের বসতবাড়ি ভেঙে সেখানকার ইট দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করার কারণে এখন তিনি গোয়ালঘরে বসবাস করছেন।

    তবে তার মনেও কোনো আফসোস নেই। তিনি বলেন, “আমি রাস্তা বানিয়েছি, আমার ছেলে-মেয়ে আমাকে বকেছে। এখন তারা বাধ্য হয়ে আমাকে গরু গোয়ালঘরে রেখেছে, কিন্তু আমি খুশি, কারণ আমি মানুষের জন্য কাজ করেছি।”

    মিস্টার আলী রাস্তা মেরামতের জন্য নিজের অর্থে ইট কিনে, বস্তা কিনে এবং নিজে পরিশ্রম করেন। তার স্ত্রীর ভাষ্যমতে, তাদের বাড়ির একটি কাঁঠাল গাছ ছিল, যার ফল দিয়ে তারা খেতে পারতেন, কিন্তু মিস্টার আলী সেই গাছও বিক্রি করে রাস্তা বানানোর কাজে ব্যবহার করেছেন।

    ১২ বছর ধরে মিস্টার আলী রাস্তা মেরামত করে আসছেন, কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা ছাড়াই। তার কাজের কারণে স্থানীয়রা তাকে “এমপি” বলে ডাকেন। তিনি জানান, আমি সরকারের কাছ থেকে কোনো বাজেট পাইনি। রাস্তা খারাপ থাকলে গাড়ি চলতে অসুবিধা হয়, মানুষ এক্সিডেন্টে আহত হয়।

    এমন মহৎ কাজের জন্য স্থানীয়রা মিস্টার আলীকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছে। যদিও আর্থিকভাবে অসচ্ছল এই ভ্যানচালক, তার পরিবারও এই কাজের প্রতি খুশি। তবে, বর্তমানে তার থাকার কোনো ঘর নেই, তাই স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারের কাছে তার জন্য একটি ঘর সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন।

    এলাকাবাসীরা বলেন, এত বড় কাজ করেছে মিস্টার আলী, শুধু আমরা নয়, গোটা উপজেলা বাসী তার জন্য গর্বিত। তিনি যেভাবে মানুষের উপকার করছেন, আমরা সরকারের কাছে তার জন্য একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

    এছাড়া, মনকষা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মির্জা শাহাদাত হোসেন খুররম ও মেম্বার কাজল আলী মিস্টার আলীকে মানসিক ভারসাম্যহীন বা পাগল বলে দাবি করেছেন।

    এদিকে, ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই মিস্টার আলীর রাস্তা নির্মাণ কাজের সংবাদ প্রচার হওয়ার পর স্থানীয় এলজিইডি তাকে অস্থায়ীভাবে সুপারভাইজার পদে নিয়োগ দেয়। সেখান থেকে যে বেতন তিনি পেয়েছেন, তাও রাস্তা মেরামতের কাজে ব্যয় করেছেন।

    মিস্টার আলী বলেন, অর্থের অভাব থাকা সত্ত্বেও, আমি খুশি যে আমি মানুষের জন্য কিছু করতে পারছি।