Blog

  • মিরপুরে এক রাতে ছয় স্থানে ডাকাতি, আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা

    মিরপুরে এক রাতে ছয় স্থানে ডাকাতি, আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা

    রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর এ ব্লকের ২০ নম্বর লাইনে একদল সংঘবদ্ধ ডাকাত এক রাতে ছয়টি দোকান ও বাসায় হানা দিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ভোর রাত ৪টা ২০ মিনিটে একটি প্রাইভেটকার থেকে তিন ব্যক্তি নেমে ‘মা মনি’ স্টোর নামে একটি মুদি দোকানের তালা কেটে ডাকাতি করে। তালা কেটে দোকানের মালপত্র ও নগদ টাকা লুট করে তারা চলে যায়। পরে আবার ফিরে এসে সাটার খুলে ক্যাশ বাক্স ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গাড়িতে তুলে নেয়। একই কৌশলে পাশের তিনটি দোকান ও দুটি বাসায় ডাকাতি চালায় চক্রটি।

    ‘মা মনি’ স্টোরের মালিক আরমান হোসেন বলেন, “সকালে এসে দেখি সাটার লাগানো, কিন্তু তালা ভাঙা। ক্যাশ বাক্স ও মালামাল উধাও।” পাঞ্জাবির দোকান মালিক আরিফুল ইসলাম ও সালমান বিরিয়ানি হাউজের মালিক রুবেল মিয়াও একই অভিযোগ করেছেন।

    একই কৌশলে কাছাকাছি তিনটি দোকানে ডাকাতি করেছে একই চক্র। ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে চক্রের অভিযান। এছাড়া ওই এলাকার আরও দুটি বাসায় একই সময় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।

    আরেক দোকানি রুবেল মিয়া বলেন, দোকানে ডাকাতির ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ এসে আলামত সংগ্রহ করেছে।

    তিনি আরও বলেন, ২৮ বছর ধরে একই ঠিকানায় দোকান করছি। এই ধরনের দুর্ধর্ষ ঘটনা কখনো ঘটেনি। নগদ টাকাসহ দেড় লাখ টাকার মালপত্র নিয়ে গেছে। দোকানের সামনের একটি ভবনের দোতলায় আমার বাসা। রাত সোয়া ১২টার দিকে দোকান বন্ধ করে গিয়েছিলাম। যে কায়দায় দোকানে চুরি করেছে তা অবিশ্বাস্য। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। জড়িতরা শনাক্ত হোক। প্রশাসন নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক।

    সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, চক্রে তিনজন সদস্য। একজনের পায়ে কেডস। পরনে সবুজ স্যুট। একজন প্রথমে আশপাশে তাকাচ্ছিলেন। এরপর অন্য দুই সঙ্গী দোকানে ঢুকে একে একে সব মালপত্র বের করে নিয়ে আসেন। এসময় তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল।

  • আসছে নতুন দিবসের ঘোষণা

    আসছে নতুন দিবসের ঘোষণা

    ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিগগির ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ দিবসটি পালনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

    রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

    তিনি বলেন, আজই ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারি হবে। এ বছর থেকে দিবসটি পালন করা হবে। তবে এ দিনে থাকবে না সরকারি ছুটি।

  • ‘রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে রমজানের পরে কঠোর আন্দোলন’

    ‘রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে রমজানের পরে কঠোর আন্দোলন’

    প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্যে করে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হারুন অর রশিদ হারুন বলেছেন, রমজানের মধ্যেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। না হলে রমজানের পরে কঠোর আন্দোলনে নামবে বিএনপি।

    শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জয়পুরহাট শহরের শহীদ ডাঃ আবুল কাশেম ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উর্দ্ধগতি, আইনশৃঙ্খলা অবনতি ও দ্রুত নির্বাচনের রোড ম্যাপের দাবিতে এক বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

    হারুন অর রশিদ বলেন, ক্ষমতায় থেকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা ছাত্রদের নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করার পাঁয়তারা করছেন। এটি জনগণ কোনোভাবেই মেনে নিবেনা। উপদেষ্টা থেকে বেরিয়ে দল করুন আমরা মেনে নিব। সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে দল গঠন করতে চান তাহলে জনগণ পিঠের চামড়া রাখবে না।

    জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেনের সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, ফয়সল আলীম, জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক মাসুদ রানা প্রধান ও আব্দুল ওয়াহাব, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হান উজ্জ্বল সহ বিএনপি ও অংগ সংগঠনের নেত্রবৃন্দ।

  • আজহারীর মাহফিলে গয়না চুরির চেষ্টা, ৮ নারী আটক

    আজহারীর মাহফিলে গয়না চুরির চেষ্টা, ৮ নারী আটক

    চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিল থেকে ৮ নারীসহ ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকালে মাহফিল চলাকালে চুরি করার সময় তাদের আটক করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রইস উদ্দীন রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

    চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার লালাপাড়ার একটি আম বাগানে এ তাফসির মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

    এ মাহফিলের আয়োজন করে জাবালুন নুর ফাউন্ডেশন। এতে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়।

    চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. রইস উদ্দীন বলেন, মিজানুর রহমান আজহারীর তাফসির মাহফিলে নারীদের বসার স্থান থেকে ৮ নারীকে আটক করা হয়েছে। এরা নারীদের গহনা চুরি ও চুরির চেষ্টা করছিলেন।

    মাহফিলের স্বেচ্ছাসেবকরা ওই নারীদের ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে নয়। বিভিন্ন জেলা থেকে তাফসির মাহফিলে এসেছিলেন তারা। এছাড়া বাইসাইকেলে লোহার রড বহনের দায়ে আরও এক কিশোরকে ধরে পুলিশে দেয় স্বেচ্ছাসেবকরা।

    ওসি বলেন, রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত আটককৃতদের বিরুদ্ধে কেউ থানায় মামলা বা অভিযোগ দাখিল করেনি। মামলা বা অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও ৫১টি মোবাইল খোয়া যাওয়ায় ঘটনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় ১৩ চুরির অভিযোগ পড়েছে।

  • আ’ন্দো’ল’নে ‘ধ’র্ষ”ণে’র ঘ’ট’না’য় ‘নি’রু’দ্যো’গে’র’ অ’ভি’যো’গ, যা ব’ল’ছে’ন স’ম’ন্ব’য়’ক’রা

    আ’ন্দো’ল’নে ‘ধ’র্ষ”ণে’র ঘ’ট’না’য় ‘নি’রু’দ্যো’গে’র’ অ’ভি’যো’গ, যা ব’ল’ছে’ন স’ম’ন্ব’য়’ক’রা

    জুলাই আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বেসরকারি এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ধর্ষণের শিকার হয়ে তিনি অন্তঃস্বত্ত্বাও হয়েছেন। এ ঘটনা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, উমামা ফাতেমা, নুসরাত তাবাসসুমসহ অন্যদের বিষয়টি জানালেও কাউকে পাশে না পাওয়ার অভিযোগও করেছেন তিনি।

    শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের সম্মুখ ভূমিকা’ নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এমন দাবি করেন তিনি। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (পুনাব) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

    অনুষ্ঠানের মঞ্চে ঘটনার বিবরণ দিয়ে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘গত ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া গোল চত্বর থেকে ছাত্রলীগের ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল আমাকে তুলে নিয়ে যায়। তারা আমাকে কলেজ রোডের পেছনে, আজমেরী ওসমানের (শামীম ওসমানের ভাতিজা) বাসার পাশের একটি অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে তারা আমাকে অনেক গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ের অফিস থেকে সবাইকে বের করে দেওয়া হয়। তবে দুজন সেখানে ছিল। পরে তারা আমাকে ধর্ষণ করে।’ যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেরাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন এই ছাত্রী।

    বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সঙ্গে কথোপকথনের তথ্য উল্লেখ করে ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ, ‘‘এ ঘটনা এখন পর্যন্ত কোনও মিডিয়ায় আসেনি। কারণ আমি নিজেই আসতে দেইনি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তারা (ধর্ষক) বাইরে ঘুরছে। তাদের কোনও শাস্তি হয়নি। সারজিস ভাই থেকে শুরু করে উমামা ফাতেমা, নুসরাত তাবাসসুম সবাই জানে। উমামা ফাতেমাকে যখন আমি জানাই তিনি বলেন— ‘ওহ আচ্ছা! তোমার সঙ্গে অনেক খারাপ হয়েছে। আচ্ছা দেখবো বিষয়টি।’ এখানেই তিনি ক্লোজ করে দিয়েছেন টপিকটি।’’

    অভিযোগের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটির মুখপাত্র উমামা ফাতেমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উনি বিষয়টা জানানোর পরপরই আমি তাকে মামলা করতে বলি। মামলা করলে আমাদের সাহায্য করতে সুবিধা হবে অথবা মামলা না নিতে চাইলেও আমরা সাহায্য করতে পারবো। প্রথমে মামলা করতে না চাইলেও পরে তিনি মামলাটি নারায়ণগঞ্জে নিতে বলেন। তখন আমি নারায়ণগঞ্জের সমন্বয়ক মুনা আপুকে বিষয়টি জানাই এবং সাহায্য করতে বলি। তখন মেয়েটি আমাকে বলে যে, মেহরাব সিফাত ও মুনা আপু (নারায়ণগঞ্জের দায়িত্বে থাকা সমন্বয়ক) উনারা বিষয়টি জানে, কিন্তু উনারা কিছু করছেন না। পরে সে আমাকে জানায় যে সে কারও উপর ভরসা করতে পারছে না। সে আমার সঙ্গে কাজ করতে চায়। আমি যে তাকে একটা দায়িত্ব দেই।‘

    এমন শুনে ‘খুব অদ্ভুত লেগেছে’ উল্লেখ করে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘সে সবাইকে রিচ করেছে, হেল্প চেয়েছে। যখন সবাই হেল্প করতে গিয়েছে, সে প্রত্যেককে বলেছে— সে হেল্প চায় না। তাকে অনেকেই বোঝানো হয়েছে, মামলা করতে বলা হয়েছে, কিন্তু সে নাকি হেল্প চায় না। সে সবাইকে গণহারে মেসেজ দিয়ে হেল্প না নিয়ে কীভাবে এটাকে ফ্রেম করা যায়, সেই পথে হাঁটছে।’

    শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠানে ধর্ষণের শিকার ওই নারী শিক্ষার্থী তার বক্তব‍্যে বলেন, ‘নুসরাত তাবাসসুম আপা (সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম) আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে নক দিতে বললে, আমি তাকে মেসেজ দেই। তিনি সিন করে রিপ্লাই দেননি। সারজিস ভাই (সমন্বয়ক সারজিস আলম) শুরু থেকে দায়িত্ব নেন, বিষয়টি দেখার। কিন্তু তাকে আমি প্রতিনিয়ত হোয়াটসঅ্যাপে মনে করিয়ে দিলেও তিনি ১ মাস পর রিপ্লাই দিয়ে বলেন— আমি কাজে ব্যস্ত আছি, তোমার ব্যাপারটি পরে দেখবো। এখানেই বিষয়টি ক্লোজ করে দেওয়া হয়। নভেম্বরের ১০ তারিখে আমি কনসিভ করি। এটাও জানানো হয়েছে।’

    এই বক্তব্যের ভিডিও এরইমধ‍্যে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আহনাফ তাহমিদ নামের একজন এই ভিডিও শেয়ার দিয়ে সমন্বয়কদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার সেই পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম আরেকটি পাল্টা পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘জনাব আহনাফ তাহমিদ, আপনার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে চাই, (শিক্ষার্থীর নাম)-কে একবার আমার সামনে এনে অভিযোগ করতে বলেন, যে তাকে সাহায্য করতে চাওয়া হয়নি। তাকে সবরকম সাহায্য দিতে চাওয়া হয়েছিল। তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তার সুচিকিৎসা, নারায়ণগঞ্জের ঘটনাস্থলে তদন্ত, মামলা সব কিছুর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সে চেয়েছিল অন্য কিছু। কিন্তু তার অনুমতি ব্যতিরেকে আমি সেটা প্রকাশ করতে পারছি না। তাকে (অভিযোগকারী শিক্ষার্থী) বলুন নাম নিয়ে অভিযোগ করতে। অন্যথায় তার স্টেটমেন্ট এবং আপনার বিরুদ্ধে না জেনে অভিযোগ করার নিন্দা একসঙ্গে উপযুক্ত স্থানে পৌঁছে দেওয়া হবে।’

    পাল্টা অভিযোগ সমন্বয়ক সামিয়া মাসুদ মম’র

    এদিকে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা ওই ছাত্রী আইনি সহায়তা নিতে গড়িমসি করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সামিয়া মাসুদ মম। তিনি এ ঘটনার শুরু থেকেই ওই নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার সঙ্গে কথোপকথনের স্ক্রিনশট ও একটি অডিও রেকর্ড পোস্ট করে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন।

    তিনি জানান, ওই নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার পরিচয় হয় আগস্টের পরে, নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার পর। এরপর থেকে তাদের মধ্যে ভালো একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই এক পর্যায়ে তিনি ধর্ষণের ওই ঘটনা জানান। পরে তাকে উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দিলে ওই ছাত্রী আর এগোয়নি বলেও জানান মম। এমনকি ধর্ষকদের নাম কিংবা চেহারাও তার মনে নেই বলেও জানিয়েছে সে।

    তিনি লেখেন, ‘একদিন হঠাৎ মাহি আমার কাছে এসে বলে, ঢাবিতে অনেক আসন ফাঁকা আছে। তার জন্য যেন একটা সিটের ব্যবস্থা করে দিই। আমি তখন ওকে বোঝাই যে, এটা পুরোপুরিভাবে অবৈধ এবং এটা করাও সম্ভব না।’

    পরের ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ওই ছাত্রী ১০ আগস্ট ঢাকায় আরও একবার ধর্ষণের শিকার হয়েছিল বলেও জানিয়েছিল। ওই ছাত্রীর ভাষ্য তুলে ধরে মম বলেন, ‘সেদিন সে (অভিযোগকারী ছাত্রী) ঢাকার বাইরে এক আত্মীয়ের বিয়ে খেতে গিয়েছিল একা একা। ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা বেজে যায়। তখন সে উবারে বাইক কল করে এবং বাইক দিয়ে ফেরার পথে বাইক ড্রাইভার তাকে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, যাত্রাবাড়ীর আশপাশে একটা এলাকায় নিয়ে ধর্ষণ করে। তখন আমি তার কাছে কল লিস্ট ঘেটে বাইক ড্রাইভারের নম্বরটা দিতে বলি। যেহেতু তার ভাষ্যমতে সে উবারে বাইক কল করেছে, রাইডারের নম্বর বা ট্র্যাকিং হিস্টোরি থাকার কথা। তৎক্ষনাৎ আমাকে জানায়, সে ভুল বলেছে, উবারে বাইক কল করেনি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এক বাইকারের বাইকে উঠেছে। তারপর আমি তাকে জিজ্ঞেস করি সে, বাইকারকে চিনতে পারবে কি না। সে বললো না, চিনতে পারবে না, কারণ ধর্ষণ করার সময় বাইকারের মাথায় হেলমেট পরা ছিল।’

    তাদের সঙ্গে কথোপকথনের এমন বেশ কয়েকটি অসঙ্গতির কথা তুলে ধরে মম বলেন, যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, প্রত্যেকে তাকে আইনি পদক্ষেপসহ মেডিক্যাল রিলেটেড ব্যাপারেও হেল্প করতে চায়। কিন্তু সে বিভিন্নভাবে ইনিয়ে-বিনিয়ে গড়িমসি করতে থাকে। কোনও ডাক্তারের কাছেও যায় না, কোনো প্রেসক্রিপশনও দেখাতে পারে না। মামলা করার জন্য উদ্যোগ নিলেও সে এগোতে চায় না, গড়িমসি করে।

    ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ করে মম লিখেছেন, ‘তুমি আমাকেসহ অনেককেই বলেছো যে, আমি তোমাকে পুরোটা সময় বোনের মতো সাপোর্ট দিয়েছি। তোমাকে আমি আহ্বান করছি, সামনে আসো, মুখোমুখি হও এবং বিনা কারণে মিথ্যাচার না করে সত্যটা সামনাসামনি পরিষ্কার করো সৎ সাহস থাকলে। যেভাবে আজ ওপেনলি একপাক্ষিক বক্তব্য দিয়ে সবার সামনে মিথ্যাচার করেছো, সেভাবে সামনাসামনি হয়ে বলো যে, তোমাকে বৈষম্যবিরোধীর সবাই সাপোর্ট দিতে চেয়েছে কিনা? তুমি গড়িমসি করেছো কিনা?’

  • খাদের কিনারে থাকা অর্থনীতিকে টেনে তুলছে সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

    খাদের কিনারে থাকা অর্থনীতিকে টেনে তুলছে সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

    অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বর্তমানে যারা দেশ চালাচ্ছেন, তারা কেউ ক্ষমতা নেননি, দায়িত্ব নিয়েছেন। অর্থনীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছিল, তা বাইরে থেকে কেউ বুঝবেন না। অন্তর্বর্তী সরকার খাদের কিনারে থাকা অর্থনীতিকে টেনে তুলছে।

    শনিবার রাজধানীর সিএ ভবনের আইসিএবি মিলনায়তনে নিজের লিখিত ‘গভর্নরের স্মৃতিকথা’ গ্রন্থের নতুন সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এ বইয়ে শুধু গভর্নরের সময়কাল নয়, নিজ জীবনের নানা স্মৃতি লেখা হয়েছে। ২০১৯ সালে বইটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশ হয়েছিল। এবারের সংস্করণে আরও কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে।

    অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ আর তিতুমীর বলেন, রাজনীতি সম্পর্কে জানা না থাকলে গভর্নর হওয়া যায় না। পৃথিবীর যেসব গভর্নর বই প্রকাশ করেছেন, তারা আসলে রাজনৈতিক বিষয়গুলো সামাল দেওয়ার আলাপ তুলে ধরেছেন। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বইটিতে লেখক তাঁর কর্মজীবনের নানা চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছেন।

    অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. রুশিদান ইসলাম রহমান, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মারুফুল ইসলাম, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ প্রমুখ।

    এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ অনেকে।

  • একই পরিবারের পাঁচজনকে গুম!

    একই পরিবারের পাঁচজনকে গুম!

    *তিন বেলা রুটিন করে মারধর করা হতো
    *সকালে একটা রুটি, দুপুর ও রাতে অল্প সাদা ভাত
    *মারধরে পা ফেটে রক্তে ভিজে যেত মেঝে
    *র‍্যাব, পুলিশ, ডিবিকে ৫৬ লাখ টাকা দিয়েও মুক্তি মেলেনি
    গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে প্রায় হাজার খানেক মানুষকে শুধুমাত্র ভিন্ন মতের হওয়ার কারণে বিভিন্নভাবে গুম করেছেন শেখ হাসিনা ও তার বাহিনীর লোকজন। গুমের শিকার পরিবার গুলোর একজনকে তুলে নিয়ে গুম করার ঘটনা শোনা গেলেও একই পরিবারের পাঁচজনকে তুলে নিয়ে গুমের ঘটনা বাংলাদেশে নজিরবিহীন। এমন ঘটনাই ঘটেছে ঝিনাইদহ জেলা সদরের একটি পরিবারের সঙ্গে। পাঁচজনকে তুলে নেওয়ার পর চারজনকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একজন আর ফিরে আসেনি। এই পাঁচজনকে উদ্ধারে পরিবারটি বিভিন্ন সময়ে র‍্যাব, পুলিশ ও ডিবিকে শেষ সম্বল জমি বিক্রি করে দিয়েছে ৫৬ লাখ টাকা। কিন্তু তাতেও তাদের মুক্তি মেলেনি।

    গুম হওয়া পাঁচজন হলেন— ঝিনাইদহ সদরের মাসুদুর রহমান, আশরাফুল আলম, আসাদুজ্জামান, কামরুজ্জামান ও (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ব্যক্তি। প্রথম চারজন সম্পর্কে আপন ভাই ও শেষ ব্যক্তি তাদের আপন ভাগিনা।

    প্রায় দেড় মাসের অধিক সময় ধরে ঢাকা মেইলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

    ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পর নানাভাবে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে, যা বিভিন্ন ইতিহাসের নির্মমতাকেও হার মানাবে। নির্যাতনের মাত্রা এতটাই প্রকট ছিল যে কারও মারধরের চোটে পা ফেটে রক্ত বের হতো। সেই রক্তে ভিজে যেত ঘরের মেঝে। কিন্তু মারধর বন্ধ হতো না। সকাল, বিকেল ও রাতে মিলে তিন দফা রুটিন করে তাদের ওপর চলত শারীরিক নির্যাতন। শুধু তাই নয়, সারাক্ষণ চোখ বেঁধে রাখা হতো। খাওয়ার হিসেবে দেওয়া হতো সকালে একটা রুটি, বাকি দুই বেলা সামান্য সাদা ভাত। আর এ খাবারও শেষ করতে হতো মাত্র দুই মিনিটে। শেষ করতে না পারলে বেধড়ক মারধর। শুধুমাত্র খাওয়ার সময় বেধে রাখা চোখ খুলে দেওয়া হতো।

    কেন তাদের তুলে নেওয়া হয়েছিল, কী অপরাধ ছিল তাদের, আর সেইদিন গুলো তাদের কীভাবে কেটেছে —তা জানতে গুমের শিকার হয়ে ফিরে আসা চারজনের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা মেইলের এই প্রতিবেদক।

    তারা শুধু প্রশ্ন করত তুই স্বীকার কর, কতজনকে জঙ্গি ট্রেনিং দিয়েছিস। আমি বলতাম ভাই আমি তো জামায়াতে ইসলামী করি। মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকি। তখন তারা বিশ্বাস করত না। প্রথমে তো তারা মনে করেছিল বড় নেতা, পরে দেখলো কিছু নয়। পরে ছেড়ে দিল।

    ঢাকা মেইলকে ভুক্তভোগী মাসুদুর রহমান
    তাদের দাবি, তাদের অপরাধ ছিল জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদের দুজন। বাকিরা কোনো রাজনীতি না করলেও শুধুমাত্র আত্মীয় বা আপনজন হওয়ায় তাদেরও তুলে নেওয়া হয়েছিল। তাদেরকে একই মাসে তুলে নেওয়া হয়। পরে বিভিন্ন জনকে পর্যায়ক্রমে ছাড়া হয়। তবে তাদের একজনের অবস্থা এতটাই করুণ হয় যে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। যখন বাসায় ফিরে এসেছিলেন অনেকের সঙ্গে ভালোভাবে কথাও বলতে পারতেন না। যদিও এখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছেন তিনি।

    তাদের একজন মাসুদুর রহমান। তিনি সেই সময় জামায়াতে ইসলামীর ঝিনাইদহ সদরের একটি ইউনিয়ন আমিরের দায়িত্ব পালন করতেন। এটাই তার বড় অপরাধ। অথচ তার নামে থানায় কোন মামলাও ছিল না। ২০১৬ সালের ৫ আগস্ট তিনি তার এক আত্মীয়ের বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর রাখা হয় ঝিনাইদহের র‍্যাব-৬ এর কার্যালয়ে। পরে নেওয়া হয় ঢাকার ডিবি কার্যালয়ে। দীর্ঘ সাত মাস তাকে গুম রাখার পর ছাড়া হয়। ততক্ষণে তিনি বাড়িতে ফিরে এসে দেখতে পান তার সম্পদ-জমিজমা সব শেষ।

    ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, আমি মাগুরায় আমার খালা শাশুড়ির বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম। তখন সাদা পোশাকে র‌্যাব পরিচয়ে তৎকালীন র‌্যাব-৬ এর সিও মেজর মনিরের নেতৃত্বে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো। ওই সময় সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখ বেধে ফেলল তারা। গাড়িতে তুলে র‌্যাব ক্যাম্পে নেওয়া হয়। এরপর সেই চোখ খুলেছিল যখন পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে আমার বাসায় আসার সময়। তারা শুধু প্রশ্ন করত তুই স্বীকার কর, কতজনকে জঙ্গি ট্রেনিং দিয়েছিস। আমি বলতাম ভাই আমি তো জামায়াতে ইসলামী করি। মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকি। তখন তারা বিশ্বাস করত না। প্রথমে তো তারা মনে করেছিল বড় নেতা, পরে দেখলো কিছু নয়। পরে ছেড়ে দিল।

    এরপর ৫ আগস্টের পর তিনি সেখানকার থানায় জিডি করতে গেলেও পুলিশ জিডি নেয়নি।

    মারধরে পা ফেটে রক্ত জমাট বেধে যেত!

    মাসুদুর রহমান বলছিলেন, আমাকে এমন সব নির্যাতন করা হয়েছে যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। নির্যাতনে এতটাই দিশেহারা ছিলাম কখন সকাল হলো, আর কখন রাত হলো বুঝতে পারতাম না। কবে শীত, কবে গরম, তবে রোজা আসল, কবে ঈদ গেল, কবে কী হলো জানতামই না। আমাকে টাইম করে সকাল-বিকাল-রাতে তিন দফা মারা হতো। মাইরের চোটে আমার পা ফেটে ফেটে রক্ত বের হতো। ঘরের পুরো মেঝে রক্ত ভিজে যেত। এরপরও বন্ধ হতো না তাদের মারধর। সকালে যখন বাথরুমে যেতাম পা থেকে বের হওয়া রক্ত জমাট বাধার ফলে সেগুলো পানি না ভেজালে উঠতো না।

    তার মতে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা পাক-ভারতে নির্যাতনের যত প্রক্রিয়া আছে, সবগুলো তার ওপর চালানো হয়েছে।

    প্লাস দিয়ে তুলে ফেলা হয়েছিল হাত-পায়ের নখ

    মাসুদ বলেন, আমি যখন বাড়িতে আসি তখন আমার হাতে-পায়ে কোনো নখ ছিল না। সব তারা তাদের কাছে থাকাকালীন প্লাস দিয়ে তুলেছে। শরীরে এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই। নির্যাতনের কারণে তিন-চার মাস ডাকলেও অজ্ঞান ছিলাম।

    ভাত-পানির কষ্ট দিয়ে রাখা হতো

    মাসুদ বলছিলেন, তার ওপর চলা নির্যাতনের কারণে শরীরে কোনো কিছু খাবারের শক্তিও ছিল না। তাকে পানি দেওয়া হলেও প্রায় এক লিটার পানি তিনি ছয় দিন ধরে খেতেন। ফলে তার শরীরে পানি শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। যার কারণে টয়লেট হতো ১২ দিন ১৫ দিন পর। এ কারণে তিনি বাড়িতে ফিরলেও স্বাভাবিক ছিলেন না।

    মাসুদ জানান, তাদেরকে গুম করে রাখার সময় খাবার হিসেবে সকালে একটা রুটি, দুপুরে ও রাতে যৎসামান্য (তার দাবি সেটা ৫০ গ্রাম চালের বেশি নয়) সাদা ভাত দেওয়া হতো। তরকারি দেওয়া হতো বা লবণ ছাড়া। এভাবে তাদের মাসের পর মাস অল্প অল্প খাবার দিয়ে দুর্বল করে বাঁচিয়ে রেখেছিল গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। তার কথায়, ‘এই ভাতে দুটি লোকমা দিলেই ভাত শেষ হয়ে যেত। আর তা খেয়েই পরবর্তী সময় পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হতো।’

    নামাজেও মারধর করা হতো!

    মাসুদ বলছিলেন, পাঁচ মাস পর আমার সেন্স আসতে শুরু করল। তার আগে তো কোনো সেন্স ছিল না। আমি যখনই নামাজে দাঁড়াতাম তখন পেছন দিক থেকে স্যান্ডেল দিয়ে বাড়ি (আঘাত) দেওয়া হতো, পড়ে যেতাম। আমি যখন বাড়িতে ফিরে এসেছিলাম তখন আমার শরীরে কাঠামো ছিল কিন্তু বডি স্ট্রাকচার ছিল না, প্রায় অ্যাবনরমাল হয়ে গিয়েছিলাম। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এখন অনেকটা সুস্থ।

    র‍্যাব, ডিবি ও পুলিশ নিয়েছে ৫৬ লাখ টাকা!

    মাসুদ জানান, তার মেজো, সেজো, ছোট ভাই ও আপন ভাগিনাকে তুলে নেওয়ার কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে র‍্যাব, পুলিশ ও ডিবিকে চাওয়া মাত্র টাকা দেওয়া হয়েছে। আর সেই টাকার পরিমাণ ৫৬ লাখ টাকার কম নয়। এই টাকাগুলো ম্যানেজ করতে তার পরিবারকে মাসুদের শেষ সম্বল ৬ শতক জমি বিক্রি করতে হয়েছে। এখন তিনি নিঃস্ব।

    আরও পড়ুন
    গুম কমিশনে জমা পড়েছে ১৬০০’র বেশি অভিযোগ
    মাসুদ দাবি, তার পরিবার পুলিশ ও ডিবি ছাড়াও সেই সময়কার র‍্যাব-৬ এর অধিনায়ক মনিরকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছেন। কিন্তু এরপর মাসের পর মাস গুম করে রাখা হয়েছিল। এছাড়াও সেই এলাকার সদর থানার ওসি উজ্জল দারোগাকেও টাকা দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

    মাসুদ বলেন, আমার তো সব শেষ। র‍্যাবকে ৫৩ লাখ টাকা দিয়ে বাড়ি আসছি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ৩ লাখ দিয়েছি ডিবি ও পুলিশ। সব মিলে ৫৬ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য আমাকে ছয় শতক জমি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এখন আমার কিছুই নাই।

    বিদেশ পালাতে বাধ্য হয়েছেন

    মাসুদ, আলম, আসাদ ও কামরুজ্জামানের পর তুলে নেওয়া হয় তাদের এক ভাগিনাকে (নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক)। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তাকে তুলে নেওয়া হয়। তিনি ৫ মাস ২৮ দিন গুম ছিলেন। পরে মুক্তি পেলেও আর দেশে থাকতে পারেননি। মাসুদের ভাগিনা জানান, যখন তাকে তুলে নেওয়া হয়, সেদিন তিনি তার ফুপুর বাড়িতে ছিলেন। রাত দুইটায় তাকে ঘুম থেকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর পুরো সময় তার চোখ বাধা ছিল, সঙ্গে চলত নির্যাতন। আর একটি কথাই জানতে চাওয়া হতো, তার মামারা কেন জামায়াত-শিবির করেন, তিনিও জড়িত কিনা।

    তিনি বলেন, শেষে ছাড়লেও তারা বলেছিল যদি এসব কথা কাউকে বলিস তাহলে তোকে আবারও তুলে নিয়ে আসব। পরে আমি পরে আর দেশে থাকতে পারি নাই। কারণ গুমের শিকার হয়ে ফেরত আসার পরও র‍্যাব আমাকে ১০ দিন ১৫ দিন পর আবারও তুলে নিত। গ্রেফতার হয়েছে অমুক, তোকে লাগবে। নিয়ে বলতো এই এরে চিনিস কিনা! এভাবে তিন-চারবার গিয়েছি। পরে আমি বিদেশ চলে যাই।

    মাসুদের ভাগিনা জানান, তার নামেও কোনো থানায় মামলা ছিল না। কিন্তু তাকে বিনা অপরাধে সেদিন তুলে নিয়ে প্রায় ছয় মাস গুম করে রাখা হয়েছিল। পুরো সময়ে তিনি কোথায় ছিলেন, কারা তার কাছে আসত, তা দেখতে পেতেন না চোখ বেধে রাখার কারণে।

    আসাদুজ্জামানকে ২০১৬ সালের ২ আগস্ট তার ভায়রা ভাইয়ের বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। যারা তুলে নিয়েছিল তাদের সবার গায়ে সাদা পোশাক ছিল। এরপর তাকে সোজা চোখ বেধে নিয়ে যাওয়া হয় র‍্যা-৬ এর ক্যাম্পে। সেখানে কয়েকদিন রাখার পর নেওয়া হয় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার দূরত্বের জায়গায়। কিন্তু তাকে কোথায় রাখা হয়েছিল তা তিনি বলতে পারেন না। কারণ, তার দুই চোখ সারাক্ষণ বাধা থাকত। তাকে ছাড়া হয় ২০১৬ সালের ৫ নভেম্বর। এই সময়ে তাকে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে, শিবিরের সঙ্গে জড়িত তার ছোট ভাই কামরুজ্জামান কোথায়। পাশাপাশি নির্যাতন চলতো সমান তালে। তিনি বলেন, আমাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। শুধুমাত্র টাকা আদায়ের জন্য। অথচ আমার নামে কোনো মামলা ছিল না। আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। অপরাধ আমার দুই ভাই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করে।

    আসাদুজ্জামান বলেন, আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর র‍্যাব-৬ এর মেজর মনিরকে আমরা আড়াই লাখ টাকা দিয়েছি। তার মুখের ভাষা ছিল জঘন্য। সে বলত, ঝিনাইদহে কোনো জামায়াত-শিবিরের বংশ রাখব না। সবাইকে জেলা ছাড়া করব। আমি ছাড়া পাওয়ার পর যখন সদর থানায় গেলাম, তখন ওসি বলল, আপনার এখন অভিযোগ করাটা ঠিক হবে না, অভিযোগ করলে উল্টো আরও বিপদে পড়বেন। এরপর আর ভয়ে জিডিও করা হয়নি। তিনি বের হয়ে এসে দেখেন, তার ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চাকরিটাও নেই। পরে সেখানে আবেদন দিয়ে জীবিত প্রমাণ করে তিনি চাকরি ফেরত পান।

    আরও পড়ুন
    ‘আলেপের বিরুদ্ধে গুম করা ব্যক্তির স্ত্রীকে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে’
    আশরাফুল আলমকে তুলে নেওয়া হয় ২০১৭ সালের ৭ মে খুব সকালে। তিনি জানান, তাকে খুলনায় তার কর্মস্থল থেকে সাদা পোশাকে প্রশাসনের লোক পরিচয়ে তাকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর গাড়িতে তুলে দিনভর বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হয় তাকে। সেই সঙ্গে গাড়িতে পিঠ মুড়িয়ে ফেলে রেখে চলে ব্যাপক মারধর। বিভিন্ন অপরিচিত মানুষের নাম বলে তার কাছে জানতে চাওয়া হতো তারা তার কাছে আসে কিনা। এরপর নেওয়া হয় র‍্যাব-৬ এর কার্যালয়ে। এরপর সন্ধ্যার পর তার ছোট ভাই কামরুজ্জামানকে একই গাড়িতে নেওয়া হলো ঢাকায়। ঢাকায় দুই ভাইকে ডিবি অফিসে রাখা হয়েছিল।

    ঝিনাইদহ থেকে মিন্টো রোডের ডিবি অফিস!

    আশরাফুল বলছিলেন, আমাদের যখন গাড়িতে তোলা হলো, আমি ছোট ভাইয়ের কণ্ঠ শুনে বুঝলাম সে আমার ভাই। পরে ডিবির অফিসে নিয়ে যখন তারা নাম ঠিকানা লিখছিল তখন তারা প্রশ্ন করেছিল, তাহলে তোরা দুই ভাই। আমি বলেছিলাম, হু। এরপর দুই ভাইকে একই রুমে রাখা হয়েছিল। আমার চোখের সামনেই আমার ছোট ভাইকে মেরে রাখা হতো। একদিন দেখলাম, ছোট ভাই কামরুজ্জামান বাথরুমের দরজার সামনে পড়ে আছে। তার সারা শরীরে রক্ত। তার পাশ দিয়ে অফিসাররা বাথরুমে যাওয়া আসা করছে।

    আশরাফুল আলম আরও বলেন, ডিবির কাউকে চিনতে পারিনি। কিন্তু একজনের নাম ইমরান স্যার শুনেছিলাম চোখ বাধা অবস্থায়। আমাকে সারাদিন মারধরের পর রাতে একটা রুমে নিয়ে বেধে রাখত। পরে আমাকে অন্যখানে চালান করে দেয় তারা। আমাকে প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে আছরের সময় পর্যন্ত টানা মারত। আর বলত, এই তোরা সকলে জামায়াত-শিবির করিস না, তোরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করিস। এমন মারত যে আমরা দুই ভাই বাথরুমেও যেতে পারতাম না। একজনের সাহায্য নিয়ে তারপর যেতে হতো। তারা আমার চেয়ে আমার ছোট ভাইকে বেশি মারত।

    দেওয়া হলো জঙ্গি মামলা, সেই মামলায় সাত মাস কারাগারে

    আশরাফুল বলেন, আমাকে ডিবিতে ২৮ দিন রাখার পর চালান দেওয়া হলো মহেশপুর থানায়। সেই থানায় দুইদিন রাখার পর তারা চালান দিলো ঝিনাইদহ থানায়। সেখান থেকে জঙ্গি মামলা দিয়ে পাঠানো হলো কারাগারে। কারাগারে থাকলাম সাত মাস। আমি জঙ্গির সাথে সম্পৃক্ত এমন একটা মামলা দিয়েছে। সেই মামলায় এখনো খালাস পাইনি। আমি কারাগার থেকে জামিন হয়ে বের হওয়ার সময় আবারও ডিবি আমাকে তুলে নিয়ে গেল। পরে বুঝলাম তারা আমার পরিবারের কাছে টাকা পয়সা নেওয়ার জন্য নিয়েছিল। এরপর তার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয় জেনে তারা তাকে ছেড়ে দেয়।

    চাকরি হারান তিন ভাই ও তাদের ভাগিনা

    এই পরিবারটির মধ্যে মাসুদ একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তার অপর দুই ভাইয়ের একজন আসাদুজ্জামান একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে আর আশরাফুল আলম একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তাদের ছোট ভাগিনা ছিলেন একটি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তাদেরকে তুলে নেওয়ার পর তারা অনুপস্থিত থাকার কারণে সবার চাকরি চলে যায়। পরে তারা জীবিত প্রমাণাদি দিয়ে চাকরী ফেরতে পেলেও ভাগিনা চলে যান বিদেশে। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন।

    র‍্যাব-৬ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ!

    এই পরিবারের যাদের তুলে নিয়ে গুম করে রাখা হয়েছিল তাদের চারজনই জানিয়েছেন, র‍্যাব-৬ তাদের তুলে নিয়ে গিয়েছিল। সবাইকে তুলে নেওয়ার পর রাখা হয়েছিল সেই ক্যাম্পে। পরে চালান করে দেয় দূরের কোনো জেলায়। আর এই কাজে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখেন মেজর মনির নামে এক অফিসার। যার বিরুদ্ধে তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও করেছেন।

    র‍্যাব সদর দফতর যা জানাল

    র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি বিষয়টি জানলাম এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতনকে জানাব। তারা বিষয়টা জানার পর আশা করি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।

    এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, এমন ঘটনা বাংলাদেশে নজিরবিহীন। এটা অবশ্যই আনকমন ব্যাপার। আমার মনে হয় বিষয়টি আলাদাভাবে দেখা দরকার। একই পরিবারের ওপর কেন এটা করা হলো! আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এটা ইচ্ছেকৃতভাবে এটা করেছিল, নাকি লোকালি কারও ইন্ধনে তাদের সঙ্গে এমন করা হয়েছে সেটা পুরোপুরি তদন্ত করে দেখা দরকার।

  • এ বছরই তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন : দুদু

    এ বছরই তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন : দুদু

    এ বছরেই সরকারকে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে এবং তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।

    শনিবার বিকেলে পঞ্চগড় জেলা শহরের সড়ক জনপদের মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় এ কথা বলেন তিনি।

    শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এ বছরের মধ্যে নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। বিএনপির খেলা এখনো দেখেন নাই। কেবল কয়েকটা জনসভা শুরু করেছি। আমি ড. ইউনূসকে বলব, ভাই আপনি ভালো লোক, এদের পাল্লায় পড়বেন না। বিএনপিকে রাস্তায় নামাইয়েন না।’

    তিনি বলেন, ‘তারেক সাহেবের ১৭ বছর চেষ্টা উদ্যোগ, সংগ্রাম কম কথা নয়। তিনি তো প্রধানমন্ত্রী হবেন। এ বছরেই মধ্যে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন। সেই দিনের জন্য আজকেই সবাই হাততালি দেন। ধানের শীষ বাংলার গৌরবের প্রতীক, ধানের শীষ শহীদ জিয়ার শীষ, ধানের শীষ মাওলানা ভাসানীর শীষ, ধানের শীষ বেগম জিয়ার শীষ।

    তিনি আরো বলেন, ‘আজকে এক মাসের ঘটনায় অনেকে মনে করছে কী ফেলে দিলেন, কী হয়ে গেলেন। ৮০০টি ভাই, কারো স্বামী, কারো সন্তান এখনো ফিরে আসেনি। বিএনপি নিয়ে কথা বলেন। দেশের জন্য যদি কেউ জীবন দিয়ে থাকেন শহীদ জিয়াউর রহমান তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। বেগম জিয়া ৬টি বছর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কাছে গেছেন, তবু আপস করেননি। বেটা কই ছিলা? ১৭ বছর নজরে আসে নাই। ৬০ লাখ মামলা। কয়টা মামলা আছে তোমার? ৬০ লাখ মামলার আসামি বিএনপি। ঘরে ঘুমাতে পারেনি।’

    দুদু বলেন, ‘এমনি এমনিই বাংলাদেশ মুক্ত হয়ে গেল? এতই যদি শক্তি, এতই যদি ক্ষমতা নির্বাচনে বিরোধিতা করেন কেন? পার্টি বানাবেন, ঘোষণা করবেন, সরকার সমর্থন দেবে তারপর বুঝে দেখবেন নির্বাচন করবেন কিনা। বিএনপিকে চিনেন নাই এখনো।’

    শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আসবেন বরণ করব, বিচার হবে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলবেন। একটা দুটো মারেন নাই তো, হাজার হাজার গণহত্যা করেছেন। একটা ব্যাংকেও টাকা নেই। এত বড় চোর পরিবার। বাড়ির লোকও ৪০০ কোটি টাকা চুরি করেছে। শেখ মুজিব ৪০ হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী হত্যা করেছে।’

    এ সময় তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে নেতৃত্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ দলের মধ্যেই আগে সংস্কার আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

    জেলা বিএনপির আহবায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চুর সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির ও বিএনপির রংপুর বিভাগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম। বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও পৌর বিএনপির আহবায়ক তৌহিদুল ইসলাম, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট রীনা পারভীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পিপি অ্যাডভোকেট আদম সুফি, যুগ্ন আহবায়ক ও যুবদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মির্জা নাজমুল ইসলাম কাজল, যুগ্ম আহবায়ক এম এ মজিদ, বিএনপি নেতা ইউনুস শেখ প্রমুখ। সমাবেশে জেলা, পাঁচ উপজেলা, তিন পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিটের বিএনপিসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের কয়েক হাজার নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

  • আগে স্থানীয় নির্বাচন, পরে জাতীয় নির্বাচন: জামায়াত আমির

    আগে স্থানীয় নির্বাচন, পরে জাতীয় নির্বাচন: জামায়াত আমির

    জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগে স্থানীয় নির্বাচনগুলো সম্পন্ন করতে হবে, যাতে জনগণ তাদের সেবা পেতে পারে। উপযুক্ত সংস্কার নিশ্চিত করার পরই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

    শনিবার বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে আয়োজিত পথসভায় তিনি এ কথা বলেন।

    তিনি আরও বলেন, যারা চাঁদাবাজি করেন তাদের বলছি, আল্লাহ ভিক্ষাকে হালাল করেছেন, কিন্তু চাঁদাবাজিকে হারাম করেছেন। তাই চাঁদাবাজি না করে ভিক্ষা করা উত্তম। আপনারা যদি আমাদের কাছে সহযোগিতা চান, আমরা আপনাদের সহায়তা করতে প্রস্তুত, কিন্তু আল্লাহর ওয়াস্তে চাঁদাবাজি করবেন না।

    আরও পড়ুনঃ অর্থ পাচারে নিজেই মানি এক্সচেঞ্জ চালু করেন ডিবি হারুন
    জামায়াত আমির বলেন, দেশের ন্যূনতম রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কার নিশ্চিত করার পরই আমরা জাতীয় নির্বাচন চাই। পিআরআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়া উচিত, যাতে কারও ভোট নষ্ট না হয় এবং প্রতিটি ভোটের মূল্য থাকে।

    পথসভায় সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট মাসুদুল ইসলাম বুলবুল। সভা পরিচালনা করেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া।

    বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি এটিএম মাসুদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি কামাল উদ্দিন, সাবেক জেলা আমির মাওলানা আবদুর রহিম পাটওয়ারী এবং শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান।

    এছাড়া বক্তব্য রাখেন জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আবুল হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, মুহাদ্দিস আবু নসর আশরাফী, শহর আমির অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান খান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি অধ্যাপক রুহুল আমিন, ফরিদগঞ্জ আমির ইউনুস হেলাল, শাহরাস্তি আমির মোস্তাফা কামাল, হাজীগঞ্জ উপজেলা আমির কলিম উল্লাহ, পৌরসভা আমির আবুল হাসানাত, ছাত্রশিবিরের শহর সভাপতি মোহররম আলী ও জেলা সভাপতি ইব্রাহীম খলিল।

    পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভার সূচনা করেন সদর উপজেলা আমির মাওলানা আফসার উদ্দিন মিয়াজী। সভায় দলের অন্যান্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।

  • ৭ লাখ টাকায় বৈষম্যবিরোধীদের কমিটি ঘোষণার অভিযোগ, হাসনাতকে অবাঞ্ছিত

    ৭ লাখ টাকায় বৈষম্যবিরোধীদের কমিটি ঘোষণার অভিযোগ, হাসনাতকে অবাঞ্ছিত

    গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের নিয়ে মানিকগঞ্জ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে দাবি করে প্ল্যাটফর্মটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সদস্য সচিব আরিফ হোসেন ও সহ-সমন্বয়ক রুদ্রকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন জেলার নেতাকর্মীরা। তারা প্ল্যাটফর্মটির জেলা কমিটি স্থগিত করার দাবিতে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন তারা এ কথা জানান।

    জেলায় নবগঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি গঠন নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ এনে মানিকগঞ্জ জেলা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন একটি অংশ। কমিটি স্থগিত না করা হলে মহাসড়ক অবরোধ ও থানা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

    শনিবার দুপুরে মানিকগঞ্জ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জুলাই বিপ্লবী-আহতের ব্যানারে নবগঠিত কমিটি থেকে পদত্যাগকারী আড়াই শতাধিক নেতাকর্মীদের পক্ষে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংসবাদ সম্মেলন করা হয়। একইসঙ্গে সংবাদ সম্মেলন থেকে নবগঠিত মানিকগঞ্জ কমিটি স্থগিত করে আন্দোলনে আহতদের যথাযথ মর্যাদাসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দেওয়া হয়।

    সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সদ্য পদত্যাগকারী যুগ্ম-সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম রাজু বলেন, ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে গত বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের দোসর নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের নিয়ে অফিসিয়াল পেজে নতুন করে পকেট কমিটি প্রকাশ করা হয়। নতুন পকেট কমিটির আহ্বায়ক একজন বহিরাগত, সদস্য সচিব ও যুগ্ম সদস্য সচিব ছাত্রলীগের
    সঙ্গে হামলা করছে ১৮ জুলাই। মুখপাত্র ছাত্রলীগের সঙ্গে ও আহমেদ অনিক যুবলীগের কর্মী। এ ছাড়া কমিটিতে কমপক্ষে ২০ ছাত্রলীগ ও তার অনুসারীরা আছে।

    পদত্যাগকারী যুগ্ম সদস্য সচিব নাসিম খান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অযোগ্য ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে। এ কারণে এই পকেট কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ইতোমধ্যে প্রায় তিন শতাধিক সদস্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।

    এ ধরনের পকেট কমিটি করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করে মানিকগঞ্জ জেলার দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক রুদ্রসহ কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ হোসেনকে মানিকগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি মানিকগঞ্জের পকেট কমিটি স্থগিত না করলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করা হবে এবং সামনে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।

    এ সময় নবগঠিত কমিটির পদত্যাগকারী সদস্য শাকিল হোসেন, কায়সার আহমেদ, বনি আহমেদ, আরমান হোসেন, যুগ্ম সদস্য সচিব নাসিম খান ও সংগঠক কাউসার আহমেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

    উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্রুয়ারি ওমর ফারুককে আহ্বায়ক ও নাহিদ মনিরকে সদস্য সচিব করে ৪২১ সদস্য বিশিষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মানিকগঞ্জ জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি।