ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, আজ ইরানি জনগণের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ও সংহতি। তিনি বলেন, আমাদের এখন এক হয়ে দাঁড়াতে হবে গণহত্যাকারী ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে।
আজ সোমবার (১৬ জুন) পার্লামেন্ট অধিবেশনে দেওয়া এক ভাষণে তিনি ইসরায়েলি হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী এবং অসংখ্য সাধারণ নাগরিকের শহীদ হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান।
পেজেশকিয়ান বলেন, শত্রুদের সহিংসতা, হত্যা বা সন্ত্রাসের মাধ্যমে আমাদের জাতিকে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। যারা শহীদ হন, তাদের স্থানে শত শত মানুষ উঠে আসে পতাকা বহনের জন্য—অত্যাচার, অন্যায় ও বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে।
তিনি বলেন, ইরানি জনগণ বারবার প্রমাণ করেছে যে, তারা কোনো বর্বরতা বা আগ্রাসনের মুখে মাথা নত করে না।
তিনি আরও বলেন, ইরান এই যুদ্ধের শুরুকারী নয়। আজ আমাদের দরকার ঐক্য ও সম্মিলিত প্রতিরোধ। সব মতভেদ ভুলে পুরো জাতিকে একত্রিত হয়ে এই আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের মধ্যে যেসব ভিন্নতা ও সমস্যা আছে, সেগুলো এখন পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময়। এখন দরকার সাহসিকতা ও সংহতি।
তিনি বলেন, পারমাণবিক শক্তি ও গবেষণায় অংশ নেওয়া ইরানের অধিকার, যা কেউ কেড়ে নিতে পারে না। আমরা আমাদের এই ন্যায্য অধিকার অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং কোনো শক্তিকেই ভয় করি না।
ইরানি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, আমরা সব মুসলিম দেশের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, কারণ তারা আমাদের ভাই। আজ অধিকাংশ মুসলিম দেশ আমাদের পাশে আছে।
পেজেশকিয়ান অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক নীতিমালাকে উপেক্ষা করে ইসরায়েলকে হামলার সুযোগ দিয়েছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালাতে উৎসাহ দিচ্ছে। আমরা যুদ্ধ চাই না, কখনো যুদ্ধ শুরুও করিনি। কিন্তু ইসরায়েল আমাদের বিজ্ঞানীদের, সামরিক নেতাদের ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘একজন পরমাণু বিজ্ঞানী কী অপরাধ করেছিল যে, সপরিবারে তাকে হত্যা করা হলো? বিশ্বের আরেক প্রান্ত থেকে এসে একজন বিজ্ঞানীকে হত্যা করার অধিকার কে দিয়েছে?’
উল্লেখ্য, শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় শহীদ হয়েছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি, আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি, মহাকাশ বিভাগের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরআলি হাজিজাদেহ, জ্যেষ্ঠ কমান্ডার জেনারেল গোলাম আলি রাশিদ এবং আইআরজিসি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি। এ ছাড়া শহীদ হয়েছেন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ফেরেইদুন আব্বাসি, ড. মোহাম্মদ মেহদি তেহরাঞ্চি এবং ড. আবদুলহামিদ মিনুচেহর।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ইতোমধ্যে ইসরায়েলের অধিকৃত অঞ্চলে আট দফায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে, যার সর্বশেষ ধাপকে সংস্থাটি ‘এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ও বিধ্বংসী’ আখ্যা দিয়েছে।
‘অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি’ নামে চালানো এই পাল্টা আঘাতে ইরান জানিয়ে দিয়েছে, তারা নির্যাতনের জবাব দিতেই জানে। প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেন, আমরা শহীদ হয়েছি, কিন্তু নত হইনি। আমরা প্রতিরোধে আছি, থাকব।
সূত্র: প্রেস টিভি
Leave a Reply