মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার: সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেল

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তার মা তাহমিনা বেগমের মরদেহ তাদের নিজ বাসা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের প্রাথমিক ধারণা এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে কুমিল্লার নগরীর কালিয়াজুরী পিটিআই মাঠ সংলগ্ন নেলী কটেজ ভবনের দ্বিতীয় তলার পৃথক দুটি কক্ষ থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়।

জানা যায়, নিহত তাহমিনা বেগমের পরিবার প্রায় ৪ বছর ধরে কালিয়াজুড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় রয়েছেন। গত বছরের অক্টোবরে স্বামীর মৃত্যুর পর তাহমিনা বেগম মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করছিলেন। ঘটনার দিন রাতে তার বড় ছেলে ঢাকা থেকে বাসায় আসলে ঘরের দরজা খোলা দেখেন। প্রথমে তারা ধারণা করেন তাদের মা ও বোন ঘুমিয়ে আছে। পরে অনেকক্ষণ পর খাওয়া-দাওয়ার জন্য ডাকতে গেলে কাছে গিয়ে নিশ্চিত হন, তারা দু’জনই মৃত।

প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানায়, আপাতত পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড মনে হচ্ছে। এছাড়া নিহত ব্যক্তিদের শরীরে তেমন কোনো আঘাতের চিহ্ন না পাওয়া গেলেও মেয়ের গলায় একটি দাগ দেখা গেছে এবং মায়ের একটি চোখ রক্তাক্ত ছিল। এ থেকে ধারণা করা হয় তাদের শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

তবে এ ঘটনায় পাশের হাতেখড়ি আনন্দ পাঠশালার একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ হওয়ার পর ঘটনায় নতুন তথ্য যুক্ত হয়। এতে দেখা যায়, রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা ৮ মিনিটে টুপি ও পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা এক অজ্ঞাত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাটটিতে প্রবেশ করেন। এরপর বেলা ১১টা ২২ মিনিটে ওই ব্যক্তিকে বের হতে দেখা যায়। তবে ১২ মিনিট পরই তিনি আরেকদফা ফ্ল্যাটের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। কিন্তু এবার হাতে দুটি ব্যাগসহ প্রবেশ করেন।

এরপর দুপুর ১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত তাকে আর ওই ফ্ল্যাট থেকে বের হতে দেখা যায়নি। তারপর স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে সিসিটিভি ক্যামেরাও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পরবর্তীতে তিনি কখন বের হয়েছেন তা ক্যামেরায় ধরা পড়েনি। ফুটেজ অনুযায়ী অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিকে মধ্যবয়স্ক (৪০-৪৫ এর আশেপাশে বয়স) বয়স বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়ে ওই স্কুলটির সভাপতি আবু জাহেদ বলেন, একজন পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তিকে বেশ কয়েক বার বাসায় ঢুকতে দেখা গেছে। পরেরবার যখন ঢুকে তখন পোশাকে একটি পরিবর্তন ছিল। তবে পুলিশ বলছে দু’জন একই ব্যক্তি। পরে স্কুল ছুটি হলে সিসিটিভি বন্ধ করে ফেলি। বন্ধ করার আগপর্যন্ত লোকটি বাসার মধ্যেই ছিল। এর আগে উনাকে স্কুলে বা এই এলাকায় দেখিনি।

তবে ইতোমধ্যে দুপুরের পর এ ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থেকে আটক করেছে র‍্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লা কোম্পানি। আটককৃত ব্যক্তির নাম আব্দুর রব (৭৩)। তিনি পেশায় একজন কবিরাজ। তার বাড়ি নাঙ্গলকোট উপজেলায়। এছাড়া নিহতের সঙ্গে সবশেষ আব্দুর রবের যোগাযোগ হয়েছিল বলে জানায় র‍্যাব।

এ নিয়ে র‍্যাব-১১ সিপিসি-২ এর কুমিল্লা কোম্পানি অধিনায়ক মেজর সাদমান ইবনে আলম বলেন, সন্দেহভাজন একজনকে নাঙ্গলকোট থেকে দুপুরে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।