সিলেটের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ ‘সাদাপাথর’ এলাকায় সম্প্রতি নজিরবিহীন লুটপাট হয়েছে। একসময় মনোমুগ্ধকর সেই ‘সাদাপাথর’ এলাকাটি এখন প্রায় বিবর্ণ এবং ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। সোমবার (১১ আগস্ট, ২০২৫) এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আগের চার বছর জাফলং-এ পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে পেরেছিলাম, এখন আমি উপদেষ্টা হয়েও পারলাম না।”
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পাথর উত্তোলনে সর্বদলীয় ঐক্য দেখছি। একটি সুন্দর জিনিস কী করে হাতে ধরে কেমন অসুন্দর করতে হয় সেটা শিখতে হলে বাংলাদেশে আসতে হবে। চোখের সামনে অপূর্ব সুন্দর একটি জায়গা জাফলং চোখের সামনে নষ্ট হতে দেখলাম। ধ্বংসলীলা দেখলাম।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “শুনলাম, এই পাথরগুলো নাকি তুলতেই হবে। কেন তুলতে হবে, কেন? কারও কাছে কোনো পরিসংখ্যান নেই। অথচ পরিসংখ্যান বলছে দেশের চাহিদার মাত্র ৬ ভাগ পূরণ হয় এই পাথরগুলো তুলে। বাকি ৯৪ ভাগই আমদানি করতে হয়। ৯৪ ভাগ আমদানি করতে পারলে বাকি ৬ ভাগ কেন পারলাম না!”
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, “কেন আমরা ভিয়েতনামে গিয়ে ওদের নদীর ইকো ট্যুরিজম দেখি, কেন আমরা জাফলং-এ একটা ইকো ট্যুরিজম করতে পারলাম না! আমরা যেমন সৌন্দর্যমণ্ডিত জাফলং দেখেছি, কেন নতুন প্রজন্ম সেই জাফলং দেখতে পারল না! সেখানে আবার রাজনৈতিক ঐক্য দেখলাম।”
উপদেষ্টা বলেন, “সিলেটে দুজন উপদেষ্টা গেলাম, সেখানে পাথর তুলতে সর্বদলীয় ঐক্য দেখলাম। আগের চার বছর জাফলং-এ পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে পেরেছিলাম, এখন আমি উপদেষ্টা হয়েও পারছি না। জাফলং রক্ষা করব বলে কোনো ঐক্য দেখলাম না। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের বাস্তবতা। জাফলংটা ধ্বংস করে দিয়ে কীসের উন্নয়ন, কার উন্নয়ন হচ্ছে?”
তিনি আরও যুক্তি দেন, “আমরা যদি পাথর না তুলে ইকো ট্যুরিজম করি, হিসাব করে দেখুন পাথর তুলে কত আয় হয় আর ইকো ট্যুরিজম থেকে কত আয় হয়! এই কম্পারেটিভ অ্যানালাইসিস কী কেউ করেছে? একজন ডিসি বলেছিলেন, ইকো ট্যুরিজমে আমরা পাথর তোলা থেকে বেশি আয় করতে পারব। একটা মানুষ সারাদিন পানিতে নেমে পাথর তোলেন, এটাকে আপনার এমপ্লয়মেন্ট বলেন! এটা এক্সপ্লয়েটেশন। এটা একদম ক্লিয়ার কেস অফ এক্সপ্লয়েটেশন।”
ধলাই নদীর উৎসমুখে সীমান্তের জিরো লাইন সংলগ্ন ১০ নম্বর এলাকার নাম ‘সাদাপাথর’। সেই সাদাপাথর এলাকায় প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটকের পদচারণা ঘটে কেবল সৌন্দর্যের টানে। কিন্তু নজিরবিহীন লুটপাটের কারণে মনোমুগ্ধকর সেই ‘সাদাপাথর’ এলাকাটি এখন প্রায় বিবর্ণ।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দাদের অনেকে বলেছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এখানে দিনে ও রাতে লুটপাট চলেছে। প্রতিরাতে অন্তত শতাধিক গাড়ি পাথর কোম্পানীগঞ্জ থেকে বের হয়ে যেতে দেখেছেন এলাকাবাসী। পাথর লুটের নেতৃত্বে স্থানীয় প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতা জড়িত বলেও তাদের অভিযোগ।