সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরের গভীরে পরপর চারটি শক্তিশালী ভূমিকম্প বাংলাদেশের জন্য এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে, মাত্র দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে সাগরের তলদেশে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পগুলোর মাত্রা রিখটার স্কেলে ৪ থেকে ৫-এর মধ্যে ছিল। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানিয়েছে, প্রথম ভূমিকম্পটি রাত পৌনে ৯টায় আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দূরে এবং সমুদ্রতলের ১০ কিলোমিটার গভীরে আঘাত হানে, যার মাত্রা ছিল ৫। এরপর একই স্থানে ৫, ৪.৯ এবং ৪.৬ মাত্রার আরও তিনটি কম্পন অনুভূত হয়। এর আগের দিন নিকোবর আইল্যান্ডেও ৬.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল।
বঙ্গোপসাগরে নিয়মিত ভূমিকম্প হলেও, এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের জন্য বিশেষ উদ্বেগের কারণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত—একটি ভারতীয় প্লেট, পূর্বদিকে মিয়ানমার প্লেট এবং উত্তরে এশিয়া প্লেট। ভারতীয় ও মিয়ানমার প্লেটের সংযোগস্থলটি সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হাওর অঞ্চল এবং মেঘনা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগর দিয়ে সুমাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত।
গবেষকদের মতে, এই প্লেটের সংযোগস্থলে প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ বছর আগে সর্বশেষ বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ফলে সেখানে বিশাল পরিমাণ শক্তি জমা হয়ে আছে। যদি এই শক্তি একসঙ্গে বেরিয়ে আসে, তাহলে ৮ থেকে ৯ মাত্রার একটি বিধ্বংসী ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে, যা এক মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও বর্তমানে এটি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ভারতীয় ও মিয়ানমার প্লেটের সংযোগস্থলে জমা হওয়া শক্তি যেকোনো মুহূর্তে ভূমিকম্পের আকারে বেরিয়ে আসতে পারে—যা আগামীকালও হতে পারে, আবার ৫০ বছর পরেও হতে পারে।
বিশেষ করে সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলো ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। যদি ঢাকায় ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং ভবন নির্মাণ নীতিমালা না মানার কারণে জনবহুল এই শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে, যেখানে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
১৮৮৫ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরের ভূগর্ভস্থ ফাটল রেখায় ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৩৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সেখানে আর এত বড় ভূমিকম্প হয়নি। গবেষকদের ধারণা, যদি সেই ফাটল রেখায় ৬.৯ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে কেবল ঢাকায় প্রায় ৮ লাখ ৬৪ হাজার ভবন ধসে পড়তে পারে, যা রাজধানীর মোট ভবনের ৪০ শতাংশ। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।