শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে যশোর শিক্ষাবোর্ড ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা শিক্ষাবোর্ড ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি দেন শির্ক্ষাথীরা।
তিন ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোসাম্মৎ আসমা বেগম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবদুল মতিনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনঢ় থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি উপস্থাপন করেন।
বোর্ডের কর্মকর্তারা আশ্বাস দেন শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। এরপর শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবোর্ড চত্বরে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।
এরপর মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবোর্ড থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে। সেখানে গিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগসহ নানা দাবিতে স্লোগান দেন। এরপর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলামের কাছে স্মারকলিপি রদন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, মাইলস্টোন ট্রাজেডির পর এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিতে শিক্ষাসচিব ও শিক্ষা উপদেষ্টা গড়িমসি করেছেন। তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তথ্য উপদেষ্টার মাধ্যমে রাত ৩ টার দিকে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ করেছে সকাল ৮ টার দিকে। অনেকেই জানতে পারেনি। দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি হয়েছে। একই সঙ্গে মাইলস্টোন স্কুলে নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ করতে হবে। আহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
শিক্ষকদের গায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাত তোলা-এই জঘন্য ঘটনার জন্য জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমতা চাইতে হবে। নিহত প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরনো প্লেনগুলো বাতিল করে আধুনিক প্লেন চালু করতে হবে। বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিবর্তন করে আরও মানবিক ও নিরাপদ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ‘স্বাধীনতার পক্ষ বা বিপক্ষকে অস্ত্র বানিয়ে আমরা বিভেদ তৈরি করতে চাই না’
এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফারহানা হোসেন অরণ্য বলেন, মাইলস্টোনের বিমান দুর্ঘটনায় সারাদেশের মানুষ শোকাহত। কিন্তু শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিব এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।
তথ্য উপদেষ্টা তার বাসায় গিয়ে মিটিং করার পর রাত ৩ টার দিকে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। তাহলে শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের কাজ কি?
তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এজন্য তাদের দুইজনের পদত্যাগ দাবি করছি। একই সঙ্গে মাইলস্টোলনে নিহত ও আহতদের তালিকা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিষয়ে দাবি জানাচ্ছি।
আরেক পরীক্ষার্থী মুনজাইরা তাব্বাচ্ছুম জারা বলেন, ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় পুরো দেশ কাঁদছে। আমরা আমাদের ছোট ছোট শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের হারিয়েছি। স্বজন হারিয়েছি।
যেভাবে দগ্ধ হয়ে স্কুল শিক্ষার্থীরা মারা গেছেন তা অবর্ণনীয়। ভাবতেই বুকের ভিতর হু হু করে ওঠে। অথচ অথর্ব ও অযোগ্য শিক্ষা উপদেষ্টার সেগুলো চোখে পড়ে না। এজন্যই তিনি আজকের পরীক্ষা স্থগিত করেননি।
আরও পড়ুনঃ ব্রেকিং নিউজ: মারা গিয়েছেন চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী
যখন এ নিয়ে সারাদেশ সমালোচনায় উত্তাল, তখন তার ঘুম ভেঙেছে। সকালে উঠে আমাদের জানতে হয়েছে পরীক্ষা স্থগিত। অনেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে নোটিস দেখে ফিরে এসেছে। এটি কতটা বেহায়াপনা উনি কি জানেন?
অভিযোগে বলেন, এই অযোগ্য লোককে দিয়ে আমাদের শিক্ষার সংস্কার হবে না। আমরা তার পদত্যাগ চাই। শিক্ষার্থীদের লাশ নিয়ে রাজনীতি চলবে না।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোসাম্মৎ আসমা বেগম জানান, আমরা শিক্ষাবোর্ড থেকে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। আমরা ডিসিকেও জানিয়েছি। আজকের পরীক্ষা স্থগিত হবে।
আমাদের চিঠি তৈরি করতে দেরি হয়েছে। আমরা তোমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। মাইলস্টোনে শিক্ষার্থীদের হতাহতের ঘটনায় আমরা শোকাহত। ফুলের মত শিশুরা ঝরে গেল, জাতির জন্য অনেক ক্ষতির। আপনাদের দাবির বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তারা আপনাদের দাবির বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন।