সারাদেশে আধিপত্য বিস্তারকারীদের তালিকা হচ্ছে: আইজিপি

দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. বাহারুল আলম আজ বিশেষ ঘোষণা দিয়েছেন, যে সারাদেশে আধিপত্য বিস্তারকারীদের একটি তালিকা তৈরির কাজ বর্তমানে চলছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে অপরাধমূলক গোষ্ঠীগুলোর আধিপত্য নির্মূলের লক্ষ্যে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

শনিবার দুপুরে পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে অবস্থিত ঢাকা জেলা পুলিশ লাইন ও ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুল পরিদর্শনের সময় আইজিপি এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, “দেশজুড়ে চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্য বন্ধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অপরাধ ও আধিপত্য বিস্তারকারীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে।”

আধিপত্য বিস্তারকারীদের তালিকা: কেন এবং কীভাবে?
আইজিপি মো. বাহারুল আলম জানিয়েছেন, আধিপত্য বিস্তারকারীরা সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে, ব্যবসায়িক পরিবেশ অস্থিতিশীল করছে এবং সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি করছে। তাই তাদের নির্ধারিত তালিকা তৈরি করে তাদের কার্যক্রম সীমিত ও বন্ধ করা হবে।

তিনি বলেন, “ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় এই আধিপত্য বিস্তারকারীদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়।”

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা
আইজিপি আরও বলেন, “দেশের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা অপরিহার্য। নিরাপদ সমাজ বিনির্মাণে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দরকার।” তিনি উল্লেখ করেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশ বাহিনীর মনোবল কিছুটা কমে গেছে, যা পরিপূর্ণ কর্মদক্ষতা অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর দৃষ্টিভঙ্গি
আইজিপির মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারণে নয়। বরং তারা সক্রিয় ও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “একজন ব্যবসায়ীকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করার ঘটনা দুঃখজনক এবং এ ধরনের অপরাধের দায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। অপরদিকে শাস্তি নিশ্চিত করার দায় আইন মন্ত্রণালয়ের।”

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমরা একটি সভ্য সমাজে বাস করি, যেখানে এ ধরনের সহিংসতা সহ্য করা যায় না। সমাজের সব শ্রেণী, পেশার মানুষকে—নীতিনির্ধারক, শিক্ষক, বাবা-মা, ডাক্তার সবাইকে অসহিষ্ণুতা কমিয়ে সমাজ শান্তির জন্য কাজ করতে হবে।”

সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আইজিপির নির্দেশে পুলিশের বিশেষ টিম গঠন করে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও আধিপত্য বিস্তার রোধে কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রযুক্তির সাহায্যে অপরাধ দমনে নজরদারি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, “সমস্ত ধরনের অপরাধ মোকাবেলায় আমাদের টেকসই ও সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার।”

আইজিপি বাহারুল আলম আরও বলেন, “বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিয়মিত সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে সমাজ থেকে সহিংসতা দূর হয় এবং তারা সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
আইজিপি মনোবলের কথাও উল্লেখ করেন, “পুলিশ বাহিনী এখনো শতভাগ কার্যক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি, কারণ গণ-অভ্যুত্থানের পর কিছুটা মনোবল কমে গেছে। এই অবস্থা দ্রুত শোধরাতে হবে।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো পুলিশের কাজকে স্বীকৃতি দেবে এবং অপরাধ দমনে আরও সহযোগিতা করবে।

দেশের নিরাপত্তায় নাগরিকের ভূমিকা
আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দু’জনেই নাগরিকদের সচেতন থাকার ওপর জোর দিয়েছেন। তারা বলেছেন, সাধারণ মানুষ পুলিশকে সহযোগিতা করলেই অপরাধ ও অসহিষ্ণুতা রোধ সম্ভব।

সারসংক্ষেপ
আইজিপি মো. বাহারুল আলম জানিয়েছেন, আধিপত্য বিস্তারকারীদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে।
চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্য রোধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা অপরিহার্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতি বাহিনীর দোষ নয়, তবে সমাজের অসহিষ্ণুতার মাত্রা কমাতে সবাইকে কাজ করতে হবে।
পুলিশ বাহিনীর মনোবল বাড়ানো ও সক্ষমতা উন্নয়ন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
নাগরিক সচেতনতা অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।