সংসার চলে মেয়ের টাকায়, সেই মেয়েকেই হত্যা করলেন বাবা! নেপথ্যে যে কারণ

২৫ বছর বয়সী ভারতের জাতীয় পর্যায়ের টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদবকে তার বাবা দীপক যাদব গুলি করে হত্যা করেন। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দেশটির গুরুগ্রামে নিজ বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ঘটনার পেছনে পারিবারিক টানাপোড়েন, বিশেষ করে রাধিকার আর্থিক স্বাধীনতা, ইনস্টাগ্রাম রিল এবং সম্প্রতি একটি সংগীত ভিডিওতে অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে অসন্তোষকেই দায়ী করছে পুলিশ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই দীপক যাদব (৪৯) খুনের দায় স্বীকার করেছেন। পুলিশকে তিনি জানান, তার গ্রামের বাড়ি ওয়াজিরাবাদে গ্রামের লোকেরা তাকে বারবার অপমান করতো, মেয়ের উপার্জনের ওপর নির্ভর করে বাঁচার জন্য। তিনি রাধিকাকে একাধিকবার অনুরোধ করেছিলেন, তার চালু করা টেনিস অ্যাকাডেমি বন্ধ করে দিতে।

দীপকের ভাষ্য অনুযায়ী, সকাল সাড়ে দশটার দিকে রান্নাঘরে রান্না করার সময় পেছন থেকে তিনবার গুলি করেন তিনি। গুলির শব্দ শুনে একই বাড়ির নিচতলায় থাকা তার ভাই কুলদীপ যাদব দৌড়ে ওপরে এসে দেখেন, রাধিকা মেঝেতে পড়ে আছে। পাশের ড্রয়িংরুমে পড়ে রয়েছে রিভলভারটি।

তাকে দ্রুত গাড়িতে করে সেক্টর ৫৬–এর এশিয়া মারিঙ্গো হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাবেক ব্যাংককর্মী দীপক যাদবের মধ্যে নাকি ধীরে ধীরে জমে উঠছিল মেয়ের সাফল্য এবং স্বাধীনতা নিয়ে ক্ষোভ। বিশেষ করে সেক্টর ৫৭-এ নিজেই টেনিস অ্যাকাডেমি খোলার পর তার ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।

পুলিশ সূত্র বলছে, দীর্ঘদিনের আর্থিক স্বাধীনতা এবং অ্যাকাডেমি চালানো নিয়ে পারিবারিক টানাপোড়েন তো ছিলই, সম্প্রতি রাধিকার একটি সংগীত ভিডিওতে অংশ নেওয়ায় ঘরে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

ওই ভিডিওটি ছিল স্বাধীন শিল্পী ইনআম-এর গাওয়া ‘কারওয়ান’ শিরোনামের একটি গান, যেটি জিশান আহমদের প্রযোজনায় এক বছর আগে এলএলএফ রেকর্ডসের ব্যানারে প্রকাশিত হয়। ভিডিওতে ইনআমের সঙ্গে একাধিক দৃশ্যে দেখা যায় রাধিকাকে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এনডিটিভিকে জানায়, দীপক ভিডিওটির প্রতিবাদ করেছিলেন এবং রাধিকাকে সেটি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মুছে ফেলতে বলেন।

সম্প্রতি একটি ম্যাচে কাঁধে আঘাত পেয়ে রাধিকা খেলা থেকে সাময়িক বিরতি নিয়েছিলেন। তবে খেলা ছাড়েননি, বরং তরুণ খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন।

পুলিশ জানায়, মেয়ের আয়ে নির্ভর করার বিষয় গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার পর দীপকের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। এফআইআরে পুলিশের কাছে দেওয়া বিবৃতিতে দীপক বলেন, ‘আমি যখন দুধ আনতে ওয়াজিরাবাদ যেতাম, মানুষ বলত আমি নাকি মেয়ের টাকায় বাঁচি। এতে আমি খুবই লজ্জিত হতাম। কেউ কেউ এমনকি মেয়ের চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল। আমি তাকে বলেছিলাম টেনিস অ্যাকাডেমি বন্ধ করতে, সে রাজি হয়নি।’

বৃহস্পতিবার সকালে দীপক নিজের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৩২ বোর রিভলভার বের করে মেয়েকে পেছন থেকে গুলি করেন। পাঁচটি গুলি ছোড়া হয়, যার মধ্যে তিনটি রাধিকাকে বিদ্ধ করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাধিকার চাচা ও অভিযুক্তের ভাই কুলদীপ যাদব থানায় এফআইআর দায়ের করেন।
তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে দশটার দিকে আমি গুলির শব্দ শুনে ওপরে যাই। দেখি আমার ভাতিজি রান্নাঘরের মেঝেতে নিথর পড়ে আছে। রিভলভারটি ড্রয়িংরুমে পড়ে ছিল। আমি ও আমার ছেলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই, কিন্তু ততক্ষণে সে মারা গেছে।’

ঘটনার সময় দীপকের স্ত্রী মঞ্জু যাদব বাড়িতেই ছিলেন, তবে পুলিশকে লিখিত বিবৃতি দিতে অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, তিনি জ্বরে ভুগছিলেন এবং ঘরের দরজা বন্ধ করে ছিলেন।

এফআইআরে কুলদীপ আরও বলেন, ‘সে ছিল একজন নামকরা টেনিস খেলোয়াড়, অনেক ট্রফি জিতেছে। ওর মৃত্যু আমাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। কেন তাকে খুন করা হলো, আমি বুঝতে পারছি না। আমি যখন ওপরে গেলাম, তখন সেখানে শুধু আমার ভাই দীপক, ভাবি মঞ্জু যাদব এবং রাধিকা ছিল।’

সূত্র: এনডিটিভি