ক্যানসারের সঙ্গে লড়ে ছেলে মারা গেছেন পাঁচ মাস আগে। কিন্তু এক মায়ের বিশ্বাস, এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি। বংশরক্ষায় তিনি মৃত ছেলের শুক্রাণু চেয়ে আবেদন করেন আদালতে। মায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রাণু ফার্টিলিটি সেন্টারে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ঘটনাটি ভারতের মুম্বাইয়ের।
মুম্বাই হাইকোর্টের বিচারক মনীষ পিটালের একক বেঞ্চ গত বুধবার (২৫ জুন) এই অন্তর্বর্তী আদেশ দেন এবং মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন আগামী ৩০ জুলাই। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, আবেদন নিষ্পত্তির আগেই যদি মৃত ব্যক্তির শুক্রাণু ধ্বংস করে দেওয়া হয়, তাহলে মামলার সারবত্তা থাকবে না।
আবেদনকারী মা জানান, তাঁর ছেলে ক্যানসারের চিকিৎসার সময় কেমোথেরাপি নেওয়ার আগে শুক্রাণু ফ্রিজ করেছিলেন, তবে তাঁর মৃত্যুর পরই ফার্টিলিটি সেন্টার সেটি নষ্ট করার প্রক্রিয়া শুরু করে। কারণ, ছেলের সই করা সম্মতিপত্রে মৃত্যুর পর শুক্রাণু ধ্বংসের নির্দেশ দেওয়া ছিল। তবে মা দাবি করেন, পরিবারকে না জানিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
পুত্রবিয়োগের পর মা শুক্রাণুর নমুনাটি গুজরাটের একটি আইভিএফ কেন্দ্রে স্থানান্তরের আবেদন জানালে সংশ্লিষ্ট মুম্বাইভিত্তিক ফার্টিলিটি ক্লিনিক তা প্রত্যাখ্যান করে। তারা জানায়, অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকটিভ টেকনোলজি (রেগুলেশন) অ্যাক্ট, ২০২১ অনুযায়ী আদালতের অনুমতি ছাড়া তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না।
আইনটি ভারতে সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তিসংক্রান্ত চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে ও নৈতিকতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রণীত হয়। এতে রোগীর অধিকার সুরক্ষায় কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
আদালতের মতে, মামলাটি মৃত ব্যক্তির শুক্রাণু সংরক্ষণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইনের কী দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত, তা স্পষ্ট করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হতে পারে, বিশেষ করে যখন মৃত ব্যক্তি অবিবাহিত ছিলেন।
মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালত স্পষ্ট নির্দেশ দেন, ফার্টিলিটি সেন্টার যেন শুক্রাণুর নমুনা নিরাপদে সংরক্ষণ করে।
মামলাটি ভারতে প্রজননপ্রযুক্তির নৈতিকতা, পারিবারিক অধিকার ও ব্যক্তি সম্মতির জটিলতাগুলোকে নতুনভাবে আলোচনায় এনেছে।
Leave a Reply