ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছিলেন যে বাঙালি পাইলট

১৯৬৭ সালের ৫ জুন, ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের চারটি যুদ্ধবিমান জর্দানের মাফরাক বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। এর আগে ইসরায়েল মিশরীয় বিমান বাহিনীকে প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছিল।

এবার লক্ষ্য ছিল জর্দান।
তবে ইসরায়েলি বাহিনী সফল হওয়ার আগেই তারা দুটি যুদ্ধবিমান হারায়।

এর মধ্যে একটি ভূপাতিত করেন বাঙালি পাইলট সাইফুল আজম। সে সময় তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ছিলেন এবং জর্দান বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।
ঘটনার দিন সাইফুল আজম জর্দানের হান্টার যুদ্ধবিমান চালিয়ে ইসরায়েলি মিস্টেয়ার যুদ্ধবিমান ধাওয়া করেন। গুলি করে একটি বিমান ভূপাতিত করেন।

এরপর আরেকটি ইসরায়েলি বিমান ধাওয়া করে সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত করেন। জ্বালানি ও গোলাবারুদের স্বল্পতায় তিনি ফিরে আসেন মাফরাক ঘাঁটিতে।
পরে ইরাকের আমন্ত্রণে তিনি সঙ্গীদের নিয়ে ইরাকের হাবানিয়া বিমানঘাঁটিতে যান। ৭ জুন ইরাকের এইচ-থ্রি বিমানঘাঁটির উপর ইসরায়েলি হামলার সময় সাইফুল আজমের নেতৃত্বে ইরাকি হান্টার বিমানগুলো প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সাইফুল আজম এ যুদ্ধে দুটি ইসরায়েলি মিরাজ বিমান গুলি করে ধ্বংস করেন। তার সহযোদ্ধারা আরও দুটি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করেন।

এই সাহসিকতার জন্য জর্দান সরকার তাকে ‘উইসাম আল-ইসতিকলাল’, ইরাক ‘নুত আল-সুজাত’ এবং পাকিস্তান ‘সিতারা-ই-বাসালাত’ পদকে ভূষিত করে। এর আগে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে ভারতীয় বিমান গুলি করে ভূপাতিত করায় তিনি ‘সিতারা-ই-জুরাত’ পদক পেয়েছিলেন।

১৯৭২ সালে সাইফুল বাংলাদেশে এসে বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। ২০০১ সালে ‘লিভিং ঈগল’ হিসেবে তার নাম ইন্টারন্যাশনাল হল অব ফেমের অন্তর্ভুক্ত হয়।

পাকিস্তান বিমান বাহিনী ম্যাগাজিনের ‘সেকেন্ড টু নান’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে এয়ার কমোডর মোহাম্মদ আলী লিখেছেন, ‘সাইফুল আজম চারটি দেশের (পাকিস্তান, জর্দান, ইরাক ও বাংলাদেশ) বিমান বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দুই দেশের (ভারত ও ইসরায়েল) বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছেন। ’

অবসরের পর বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে পাবনা থেকে অংশ নিয়ে তিনি সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বাংলাদেশের সামরিক কর্মকর্তা ও বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার শহীদুল ইনাম খান তার লেখায় উল্লেখ করেছেন, সাইফুল আজমের সাহসিকতা ইসরাইলেও প্রশংসিত হয়। ২০২০ সালের জুন মাসে তার মৃত্যুর পর বিষয়, প্রধান সংবাদপত্রগুলো সাইফুল আজমের বিষয়ে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছিল।

শহীদুল ইনাম খান লিখেছিলেন, ‘১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে যখন একটা ইসরায়েলি বিমানকে নিশানা করেছিলেন সাইফুল, তখন সরাসরি আক্রমণ করার বদলে পাশ থেকে নিশানা করেন এবং বিমানের লেজে গুলি করেন। ইসরায়েলি পাইলট প্রাণে বেঁচে যান। প্যারাসুটের সাহায্যে অবতরণ করেন তিনি। ’

খান লিখেছেন, ‘পাইলট পরে জানান, তিনি যখন নিচে নামছিলেন, তখন সাইফুল রোল অ্যান্ড লুপ দিয়ে তার দিকে হাত নাড়েন এবং এরপর তিনি আরেকটি ইসরায়েলি বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করার জন্য ধেয়ে যান। সাইফুল না চাইলে ওই পাইলট বাঁচতেন না। ’

জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ছয় দিনের যুদ্ধ শেষ হয়, কিন্তু ততদিনে ইসরাইল গোলান মালভূমি, গাজা, সিনাই উপদ্বীপ ও পশ্চিম তীর (পূর্ব জেরুজালেমসহ) দখল করে নেয় এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র পুরোপুরি বদলে দেয়। তবে এই লড়াই সাইফুল আজমের কীর্তির জন্য আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *