যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে পাকিস্তান

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম দূরপাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে ফরেন অ্যাফেয়ার্স সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।

ফরেন অ্যাফেয়ার্সের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক সক্ষমতা ও আগ্রাসন নিয়ে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা, যদি পাকিস্তান একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে সফল হয়, তাহলে দেশটিকে আর ‘সাধারণ প্রতিদ্বন্দ্বী’ হিসেবে নয়, বরং পূর্ণাঙ্গ ‘পারমাণবিক প্রতিপক্ষ’ হিসেবে বিবেচনা করা ছাড়া ওয়াশিংটনের আর কোনো পথ থাকবে না।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দূরপাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ব্যাপারে পাকিস্তান বারবার দাবি করে এসেছে তাদের কর্মসূচি মূলত ভারতের সামরিক প্রাধান্য ঠেকানোর জন্য। তবে এই বক্তব্য বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করছেন। তাদের ভাষ্যমতে, পাকিস্তানের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রটি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তান সম্ভবত এমন একটি সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে ওয়াশিংটনকে এই বার্তা দিতে চাইছে যে, যদি যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে প্রতিরোধমূলক হামলার পরিকল্পনা করে, তবে তা হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি, এই সক্ষমতা ভবিষ্যতে ভারত-পাকিস্তান বিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপকেও নিরুৎসাহিত করতে পারে।

প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, পাকিস্তান যদি দূরপাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র অর্জন করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দেশটিকে মিত্র হিসেবে দেখার আর কোনো সুযোগ থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে এমন কোনো দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়।

এ ছাড়া, প্রতিবেদনে চীন ও রাশিয়ার মধ্যকার পারমাণবিক সহযোগিতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। চীন যখন তার অস্ত্রভাণ্ডার সম্প্রসারণে দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে এবং রাশিয়া বহুদিন ধরে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নীতিকে অবজ্ঞা করছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র একই সঙ্গে একাধিক ফ্রন্টে পারমাণবিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে- যার মধ্যে উত্তর কোরিয়া, ইরান এবং বর্তমানে পাকিস্তান অন্যতম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির সূচনা হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে, মূলত উপমহাদেশীয় উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে। বিশেষ করে ১৯৭৪ সালে ভারতের প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষার পর পাকিস্তান এই কর্মসূচিতে গতি আনে। ১৯৯৮ সালে ছয়টি সফল বিস্ফোরণ ঘটানোর পর দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *