ইরানের পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস হয়নি, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের দাবি

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মূল কাঠামো ধ্বংস হয়নি এবং এতে দেশটির প্রকল্প মাত্র কয়েক মাস পিছিয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগনের গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ)।

ডিআইএ-এর প্রাথমিক গোয়েন্দা মূল্যায়নের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো জানায়, গত সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের বোমারু বিমানের হামলায় ইরানের ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান পরমাণু স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তু করা হয়। তবে এসব হামলায় মূল ভূগর্ভস্থ অবকাঠামো ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রযুক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

সূত্রগুলোর বরাতে জানানো হয়, হামলার সময় ইরান বেশিরভাগ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ও গুরুত্বপূর্ণ সেন্ট্রিফিউজ সরিয়ে নিয়েছিল। ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ অংশ রয়ে গেছে অক্ষত। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মূলত ভূ-পৃষ্ঠের কাঠামো, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ও পরমাণু ধাতুতে রূপান্তরের কিছু অংশ।

ডিআইএ-এর এই মূল্যায়ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা দুজনেই দাবি করেছিলেন যে, হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়েছে। ট্রাম্প এক বক্তব্যে বলেন, “৩০,০০০ পাউন্ডের বোমা যখন নির্ভুলভাবে ফেলা হয়, তখন ধ্বংস নিশ্চিত।”

তবে হোয়াইট হাউস ডিআইএ-এর এই মূল্যায়নকে “ভুল” এবং “গোপন তথ্য ফাঁসের উদাহরণ” হিসেবে বর্ণনা করেছে। প্রেস সেক্রেটারি কারোলাইন লেভিট বলেন, “এটি একটি নিম্নপদস্থ কর্মকর্তার গোপন তথ্য লিক করার অপচেষ্টা, যার একমাত্র উদ্দেশ্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সাহসী পাইলটদের সম্মানহানি করা।”

ডিআইএ ছাড়াও মিডলবারি ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর অস্ত্র বিশেষজ্ঞ জেফ্রি লুইস বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে জানান, হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মূল অংশ অক্ষত রয়েছে। তিনি বলেন, “ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহান—এই ভূগর্ভস্থ সুবিধাগুলো এখনো কার্যকর এবং ইরান এখান থেকে দ্রুত কর্মসূচি পুনরায় শুরু করতে পারে।”

অন্যদিকে, ইসরায়েলের গোয়েন্দা মূল্যায়ন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ হামলায় ইরানের কর্মসূচি প্রায় দুই বছর পিছিয়েছে—যদিও তাদের আশঙ্কা, ইরান যদি বাধাহীনভাবে পুনর্গঠন করতে পারে, তবে এই ধাক্কা তেমন বড় প্রভাব ফেলবে না।

এদিকে, হামলার বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসে নির্ধারিত গোপন ব্রিফিং হঠাৎ স্থগিত করা হয়েছে। কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা এর কারণ জানতে চেয়েছেন।

সব মিলিয়ে, ইরানের পরমাণু সক্ষমতা কতটা ব্যাহত হয়েছে—তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মূল্যায়নে মতভেদ থাকলেও, অধিকাংশ বিশ্লেষকের ধারণা, দেশটির কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস না হয়ে অস্থায়ীভাবে থমকে গেছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *