এবার বেরিয়ে এলো হাসিনার বাসার বাবুর্চির থলের বিড়াল

গত ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের দুর্নীতির একের পর এক তথ্য বের হয়ে আসছে। হাসিনার এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুদকেও জমেছে অভিযোগের পাহাড়। এবার বেরিয়ে এলো হাসিনার বাসার বাবুর্চির থলের বিড়াল।

মো. মোশারফ শেখ (৪৭) ফরিদপুরের সালথা উপজেলার দিনমজুর বাবার সন্তান। নিজের নামটি ঠিকমতো লিখতে পারেন না তিনি। ৩০ বছর আগে এক হোটেলে বাবুর্চি হিসাবে কাজ শুরু করেন। এর মাত্র দুই বছর পর ভাগ্যক্রমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসার বাবুর্চির কাজ পান। এরপর ঘুরে যায় মোশারফের ভাগ্যের চাকা। বাবার সম্পত্তি থেকে ভাগ পেয়েছেন মাত্র ৫ শতাংশ জমি।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিজ গ্রামের প্রতিবেশী কৃষকের জমি দখলসহ সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন বাবুর্চি মোশারফ।

জানা যায়, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার বাসার বাবুর্চির চাকরি পান মোশারফ। তিনি এখন কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক। গ্রামে ও শহরে রয়েছে তার বাড়ি-গাড়ি।

সালথার ভাওয়াল ইউনিয়নের বড় কামদিয়া গ্রামের কৃষক রহমান শেখের ছেলে মোশারফ। তিনি ২৮ বছর হাসিনার বাসার বাবুর্চি ছিলেন।

তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর গা ঢাকা দেন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ দিয়েছেন বড় কামদিয়া গ্রামের কৃষক মো. চাঁনমিয়া ফকিরের ছেলে সাগর মিয়া। এরপর থেকে বেরিয়ে আসছে মোশারফের নানা অপকর্ম, নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার-জুলুম ও সম্পদের তথ্য।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে কৃষক চাঁনমিয়া ফকিরের বড় কামদিয়া ৮১ নম্বর মৌজার ৬১৮ নম্বর দাগের ৪৩ শতাংশ জমি জোর করে দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেন মোশারফ। বিভিন্ন সময় ওই জমি ছেড়ে দিতে বললে হুমকি-ধমকি ও মারধর করে চাঁনমিয়া ও তার পরিবারকে এলাকাছাড়া করেন। গত ১ জুন চাঁনমিয়ার পরিবারের লোকজন জমি উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করলে মোশারফের লোকেরা ফের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

চাঁনমিয়া ফকিরের ভাতিজা সেন্টু ফকির বলেন, আমার চাচা এক গরিব কৃষক। তার ৪২ শতাংশ জমি দখল করে পাকা ঘর নির্মাণ করেন মোশারফ। ওই ঘরের চালের ওপর একটি নৌকা তৈরি করে টানিয়ে রাখেন। তখন আমরা পুলিশ-প্রশাসনের কাছে গিয়েও কোনো সমাধান পাইনি। জমি দখল নিয়ে মুখ খুললেই আমাদের মারধর করে এবং মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করতেন মোশারফ। হাসিনার বাবুর্চি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে পুরো কামদিয়ায় সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছেন তিনি।

মোশারফের প্রতিবেশী মো. জামাল শেখ বলেন, হাসিনার বাসার বাবুর্চির চাকরি পাওয়ার পর থেকে যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান মোশারফ। কামদিয়া গ্রামে ২ বিঘা জমির ওপর করেছেন বাড়ি। মাঠেও ৩ বিঘা জমি রয়েছে। ফরিদপুর শহরের হাড়োকান্দি এলাকায় ১২ শতাংশ জমির ওপর একটি বাড়ি এবং রাজবাড়ী রাস্তার মোড় এলাকায় ৮ শতাংশ জমির ওপর আরেকটি বাড়ি রয়েছে তার।

এছাড়া ঢাকা ও ফরিদপুর শহরে একাধিক ফ্ল্যাট-প্লট ও গাড়ি রয়েছে বলে আমাদের কাছে মোশারফ নিজেই বলেছেন। বর্তমান সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা যদি অনুসন্ধান করে, তাহলে মোশারফের অনেক অজানা তথ্য ও সম্পদের হিসাব বেরিয়ে আসবে। এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য বাবুর্চি মোশারফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি তার বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি।

সালথা থানার ওসি মো. আতাউর রহমান বলেন, জমি দখলের বিষয় নিয়ে মোশারফের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *