খালেদা জিয়াকে ১৪০০ কেজির ‘কালোমানিক’ উপহার দিতে চান কৃষক সোহাগ

পটুয়াখালীর এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা এক কৃষক সোহাগ মৃধা। তাঁর জীবনের ছয়টি বছর কেটেছে একটি ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় পালনে। যার নাম দিয়েছেন ‘কালোমানিক’। ষাঁড়টির বিশালতা, সৌন্দর্য ও কালো কুচকুচে রং দেখে শুধু এলাকাবাসী নয়, অনেক দূর থেকে মানুষ এসেও বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন। কিন্তু এই ষাঁড় শুধু একটি পশু নয়। এটি হয়ে উঠেছে সোহাগ নামের কৃষকের স্বপ্ন। সাধনা, এবং দেশ নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি ভালোবাসার প্রতীক। কালমানিককে উপহার হিসেবে ঢাকা পাঠাতে ভাড়া করা হয়েছে তিনটি ট্রাক, কেনা হয়েছে ৫০ গেঞ্জি ও ক্যাপ।

সোহাগ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালের শেষের দিকে স্থানীয় চৈতা বাজার থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী কেনেন সোহাগ মৃধা। সপ্তাহ যেতে না যেতেই গাভীটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। পরে গাভীটি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেন আর বাছুরটিকে ভুসি, খৈল, সবুজ ঘাস, খড়কুটা খাইয়ে পরিবারের সদস্যরা মিলে ছয় বছর ধরে লালন-পালন করেন। সেই গাভীর বাচ্চাটিকেই তিনি লালন-পালন করেছেন সন্তানের মতো। এখন যার ওজন প্রায় ১৪০০ কেজি। দৈর্ঘ্য ১০ ফুট। উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। বাজারে এই ষাঁড়ের দাম উঠেছিল ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু সোহাগ বিক্রি করেননি। কারণ তাঁর মনে এক বিশেষ উদ্দেশ্য। তিনি চান তাঁর “কালোমানিক” কে আগামী ঈদুল আজহার কোরবানির পশু হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উপহার দিবেন।

কৃষক সোহাগ মৃধা জানান, পারিবারিক ভাবেই আমরা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার বাবা বিএনপির রাজনীতি করতেন। আমিও বিএনপিকে ভালোবাসি। কোন কিছুর আশায় নয়, ভালো লাগা থেকেই প্রিয় নেত্রীকে আমার প্রিয় কালো মানিককে উপহার দিতে চাই। আর কিছুই চাই না। এতে লাভ-লোকসানের কিছু নেই। নেত্রী যদি আমার উপহার গ্রহণ করেন তবে আমি অনেক খুশি হব।

সোহাগের মা হাজেরা বেগম জানান, ছোটবেলা থেকেই তাঁর ছেলে বিএনপিকে ভালোবাসে। বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে যায়। অনেক দিন আগে সে বলে আসছেন ষাঁড়টি খালেদা জিয়াকে উপহার দেবেন। সংসারের অবস্থা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, সোহাগের বাবা নেই। সামান্য জমি চাষাবাদ করে সংসারের খরচ চলে। খেয়েপরে কোনো রকম দিন চলে যায় তাঁদের।

আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সোহাগ বিএনপির একজন একনিষ্ঠ কর্মী। বাড়িতে মা, স্ত্রী ও দুটি শিশুসন্তান আছে। তাঁদের সহায়তায় ষাঁড়টি লালন-পালন করছেন ছয় বছর ধরে। তিনি জানিয়েছেন, ষাঁড়টি তিনি খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে চান। প্রথমে তাঁর কথা স্থানীয় লোকজনের বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু সোহাগ নাছোড়বান্দা। ষাঁড়টি উপহার দিতে কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকায় রওনা দেবেন।

একটি ষাঁড় উপহার দেওয়ার মধ্যে যে প্রতীকী ভালোবাসা লুকিয়ে আছে, তা গভীরভাবে উপলব্ধির দাবি রাখে। বর্তমান সময়ে রাজনীতি অনেকটাই শহরকেন্দ্রিক, মিডিয়া-নির্ভর এবং ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। সেখানে এক কৃষকের এই সরল কিন্তু প্রগাঢ় রাজনৈতিক অনুভূতি প্রমাণ করে দেয়, রাজনীতির শিকড় এখনো মাটির মানুষের হৃদয়ে আছে। সোহাগের এই কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার এক মানবিক প্রকাশ।

সোহাগ মৃধা কি তাঁর “কালোমানিক” খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে পারবেন কি না? উপহারটি আদৌ গ্রহণ করা হবে কি না? এর উত্তর অনাগত ভবিষ্যত বলে দেবে। কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট রাজনীতি এখনো পুরোপুরি নিঃপ্রাণ হয়ে যায়নি। একজন কৃষকের মনের কোণে এখনো ভালোবাসা, আবেগ ও ত্যাগের জায়গা আছে। সে জায়গা থেকেই উঠে আসে এমন গল্প, যা শুধু সংবাদ নয়, সময়ের সাক্ষী হয়ে থাকে।

সূত্র: জনকণ্ঠ

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *