ভাইরাল না হলে টনক নড়ে না প্রশাসনের! মেলে না আইনি সহায়তাও

ফেসবুক আর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল না হলে প্রশাসনের টনক নড়ে না! আইনি সহায়তাও পায় না ভুক্তভোগী। এমন কথার প্রমাণ মিলেছে আরও একবার।

সম্প্রতি রাজধানীর মগবাজারে ছিনতাইয়ের শিকার এক যুবকের জবানিতে উঠে এসেছে ভয়াবহ এমন অভিজ্ঞতার কথা। প্রথম দিকে থানায় গিয়ে পাত্তাই পাননি তিনি। কিন্তু, ঘটনা সামাজিকমাধ্যমে ভাইরালের পর নড়েচড়ে বসে পুলিশ।

ছিনতাইকৃত ব্যাগ ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করলে বাইক থেকে নেমে পুনরায় ভুক্তভোগী যুবককে আক্রমণ করে ছিনতাইকারীরা। ছবি: সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেয়া।
ঘটনা চলতি মাসের ১৮ তারিখের। সেদিন ভোর ৫টা ২২ মিনিটে রাজধানীর মগবাজারের গ্রিনওয়ে গলি ধরে ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন এক যুবক। হঠাৎ অপরপ্রান্ত থেকে একটি মোটরসাইকেলে আসে তিনজন। বাইক থামিয়ে চকচকে চাপাতি হাতে নেমে আসে দু’জন। ঘিরে ধরে ওই যুবককে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলোপাতারি কোপাতে শুরু করে; ছিনিয়ে নেয় যুবকের ব্যাগ, মোবাইল ও টাকা।

ছিনতাইয়ের এই ঘটনার অনুসন্ধানে নামে যমুনা টেলিভিশন। খুঁজে বের করা হয় ভুক্তভোগী যুবক আব্দুল্লাহকে।

রাজধানীর একটি ৪ তারকা হোটেলে চাকরি করেন সেদিনের ওই ঘটনার ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ। জানান, সেদিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।

আব্দুল্লাহ বলেন, দুজন চাপাতি দিয়ে আঘাত করা শুরু করলে ভয়ে-আতঙ্কে সব দিয়ে দেই। চোখের সামনে আমার সব টাকা নিয়ে যাচ্ছে ভেবে আমি বারবার ব্যাগটা ফিরিয়ে দিতে বলি। এসময় তারা আমাকে চাপাতি দিয়ে অনেকগুলো কোপ দেয়। হাত, মাথা, বুক ও বাহুতে কুপিয়ে জখম করে তারা।

আব্দুল্লাহ জানান, ছিনতাইয়ের পর গিয়েছিলেন পার্শ্ববর্তী হাতিরঝিল থানায়। আইনি সহায়তা চাইলেও মেলেনি কোনো সহযোগিতা। উল্টো মেডিকেল রিপোর্ট আনার কথা বলে হয়রানি করা হয়।

ভুক্তভোগী বলেন, থানায় গিয়ে আমি আমার জখমগুলো দেখাই এবং মামলার আবেদন করি। কিন্তু তারা আমাকে হাসপাতালে গিয়ে রিপোর্ট আনতে বলে। পরে আমি মালিবাগের একটি হাসপাতালে গেলে তারা আমাকে রিপোর্ট দেয়নি। রেফার করে ঢাকা মেডিকেলে।

চাঞ্চল্যকর ছিনতাইয়ের বিষয়ে যমুনা টিভির এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলছেন হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাজু।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে থানায় আইনি সহায়তা না পাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলে জানায় পুলিশ। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় সম্পৃক্ত দু’জনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।

হাতিরঝিল থানার ওসি মোহাম্মদ রাজু বলেন, কেউ অভিযোগ নিয়ে আসলে আমরা যেন মামলা নেই সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী যে অভিযোগ করেছেন সেটি তার অগোচরে হয়েছে বলে দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। বলেন, খোঁজ নিয়ে এর কারণ অনুসন্ধান করবেন তিনি।

এদিকে, ১৮ তারিখের ছিনতাইয়ের এ ঘটনাটি অনলাইনে ভাইরাল হয় ২৫ মে। এরপরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ভুক্তভোগীকে খুঁজে বের করে মামলাও নেয়া হয়। তবে লাগেনি কোন মেডিকেল রিপোর্ট।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন আচরণকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, কেউ বিপদে পড়লে তখন তারা প্রশাসনের কাছেই প্রথমে যায়। কিন্তু সেখানে নানা হয়রানির শিকার হতে হয় ভুক্তভোগীকে, যা খুবই দুঃখজনক।

পুলিশের এমন মামলা না নেয়া ও ভুক্তভোগীদের পাশে না দাঁড়ানোর প্রবণতায় অপরাধ দিন দিন বাড়ছে বলেও ধারণা নগরবাসীর।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *