ইসরায়েল মাত্র ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে ছয়টি দেশের ওপর হামলা চালিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, কাতার এবং ইয়েমেন। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস নেতৃত্বাধীন ভবন লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে হামাসের শীর্ষ নেতা খালিল আল-হায়ারের ছেলেও রয়েছেন। হামলার শিকারদের মধ্যে ছিলেন আল-হায়ার অফিসের পরিচালক, তিনজন দেহরক্ষী এবং একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তবে, হামলার শীর্ষ নেতারা বেঁচে আছেন বলে জানা গেছে। খবর আলজাজিরার।
এটি ছিল বৃহত্তম ইসরায়েল পরিকল্পনা সামনে রেখে আক্রমণের অংশ। এটি ইহুদিবাদী দেশটির সীমান্ত পেরিয়ে অন্যদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েল ছয়টি দেশে আক্রমণ চালিয়েছে। ষষ্ট দেশ হিসেবে কাতারকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১৫০ জনের বেশি নিহত এবং ৫৪০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি বাহিনী গাজার সিটি, উচ্চ ভবন এবং অবকাঠামো লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়ে চলেছে, যার ফলে হাজার হাজার নাগরিক নিরাপদ আশ্রয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এদিকে, সোমবার ইসরায়েলি বিমান বাহিনী লেবাননের বেকা এবং হারমেল অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে, যেখানে ৩৫ জন নিহত হয়েছে এবং আরও অনেক আহত। এই হামলাগুলো ছিল গত নভেম্বরে সই হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গের সুস্পষ্ট উদাহরণ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত, কারণ তারা তাদের কৌশলগত অবস্থান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক মনোভাব পোষণ করতে পারে। কাতারের দোহায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলার কথা উল্লেখ করে হিজবুল্লাহ মহাসচিব শেখ নাঈম কাসেম বলেন, ‘সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে।’ এমনটি টেলিভিশনকে দেয়া ভাষণে জানিয়েছেন হামাসের শীর্ষ নেতা।
এদিকে, কাতারে হামলার পর বিদেশের মাটিতে অবস্থানরত বিরোধী এবং শত্রুদের লক্ষ্য করে হামলা শানিত করার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
কাতারে হামাস নেতাদের আবারো হত্যার হুমকি দিয়েছেন যদি দোহা ওই গোষ্ঠীর কর্মকর্তাদের বহিষ্কার না করে। আন্তর্জাতিক ক্ষোভ সত্ত্বেও, নেতানিয়াহু বুধবার বলেন, অন্যান্য দেশগুলোকে ইসরায়েলের আক্রমণ এবং হত্যাযজ্ঞকে ‘প্রশংসা’ করতে বলা উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমি কাতার এবং অন্যান্য সব দেশকে বলছি যারা সন্ত্রাসী আশ্রয় দেয়, আপনারা তাদের বহিষ্কার করুন অথবা তাদের বিচার করুন- যদি না করেন, আমরা করব।’
এ মন্তব্য কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের আগ্রাসী হামলার একদিন পর আসে। দোহায় তখন গাজার জন্য একটি যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছিল।
এ বিষয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি ‘কাতারের এলাকা লক্ষ্য করে কাপুরুষোচিত হামলা’ এবং ‘ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট হুমকি’।