‘বিশ্বাস হয়নি যে দলের জন্য আমি সব করছি, সেই দল আমাকে শোকজ করবে’

বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. ফজলুর রহমান বলেছেন, ‘শুরুতে বিশ্বাস হয়নি যে দলের জন্য আমি সব করছি, সেই দল আমাকে শোকজ করবে। গত এক বছর ধরে আমি শহীদ জিয়ার চেতনা, তার মুক্তিযোদ্ধা মুখ এবং মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা রক্ষা করছি। বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাদের দল, শহীদ জিয়ার দল-এসব কেবল ক্রমাগত আমিই বলছি। তবে দল থেকে আমার বিরুদ্ধে কূরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও ধর্মবিরোধিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি অভিযোগের জবাব দিয়েছি। কিন্তু তা মানা হলো না। দল থেকে তিন মাসের জন্য আমার সব পদ স্থগিত করা হলো। আমি বুঝলাম না আমার অপরাধ কী। এরপরও দলের সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিয়েছি। আপনারাও মেনে নিয়েছেন। তিন মাস পর হয়তো এ স্থগিতাদেশ উঠে যাবে।’

গতকাল সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে কিশোরগঞ্জের ইটনা সদরে ফজলুর রহমানের পক্ষে বিশাল মিছিল ও সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

এসময় তিনি আরও বলেন, ‘হাসিনার পতনের পর আমি বর্তমান সরকারকে জান দিয়ে সমর্থন দিয়েছি। ছাত্র-জনতাকে নিয়ে বহুবার বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু আন্দোলনের ভেতর থেকে এমন কিছু কথা উঠতে শুরু করলো, যা আমি মেনে নিতে পারিনি। তারা বলল, গণতন্ত্র বা ভোটের জন্য আন্দোলন হয়নি, সংস্কারের জন্য হয়েছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করা হলো। তখন দেশের মানুষ নীরব, মুক্তিযোদ্ধারা ভয়ে তটস্থ। দলের নেতারাও কিছু বলেন না। আমি তখন বলি, রাজাকারের বাচ্চারা, আলবদরের বাচ্চারা, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ মানতে চায় না, তারা পাকিস্তানে ফিরে যাক।’

তিনি আরও বলেন, জামায়াত বলছে আমি ধর্ম মানি না। এটা তারা ছাড়া আর কেউ বলেনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে সুফিবাদে বিশ্বাস করি। হযরত আব্দুল কাদির জিলানি, খাজা মাঈনুদ্দিন চিশতি, হযরত শাহজালাল ও শাহ পরান এই সুফি ধারার সমর্থক আমি। কিন্তু যারা সুফিবাদে বিশ্বাস করে, তাদের হত্যা করতে চায় জামায়াত। দেশবাসী দেখেছে তারা লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দিয়েছে।

ফজলুর রহমান আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে দেশে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। রাজাকার ও আলবদররা চেষ্টা করছে যাতে আমি দল থেকে মনোনয়ন না পাই। তারা ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে হলেও চাইবে আমি যেন দলের এমপি মনোনয়ন না পাই। কিন্তু আমার একার ইচ্ছা নয়, আপনাদেরও বলতে হবে আমরা এই নেতা চাই। আমরা আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে ধানের শীষ মার্কায় ভোট দিতে চাই। ‘আমার বয়স এখন ৭৮। নির্বাচনের সময় হবে ৭৯। এর ৫ বছর পরে বয়স হবে ৮৪ বা ৮৫। তাই আগামী নির্বাচনই হবে আমার শেষ নির্বাচন। আপনারা যদি সমর্থন দেন, এই শেষ নির্বাচনটা আমি করতে চাই।’

সমাবেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। বিশেষভাবে নজর কাড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি। সভা শেষে সন্ধ্যার দিকে মিছিলটি ইটনা চৌরাস্তা থেকে শুরু হয়ে কলেজ মাঠে গিয়ে শেষ হয়। অংশগ্রহণকারীরা নৌকায় করে উপজেলা সদরে প্রবেশ করেন। শত শত নৌকার বহর এবং স্লোগানের মধ্যে পুরো ইটনা সদরে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রওশন আলী রুশো। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, নীহারেন্দু দেবনাথ, নবী হোসেন তজু মিয়া এবং ফজলুর রহমানের সহধর্মিনী অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম রেখা, ছেলে ব্যরিস্টার অভীক রহমান প্রমুখ।