নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জামিনে মুক্তি পেয়েছেন— খবরটি ভুয়া। রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে।
গত ৮ মে সারারাত অভিযান চালিয়ে পরদিন সকাল পৌনে ছয়টার দিকে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে তার দেওভোগের বাড়ি ‘চুনকা কুটির’ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ১২ মে এক মামলায় তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সম্প্রতি, তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর জামিনে মুক্তি পাননি। প্রকৃতপক্ষে, তিনি এখনও কাশিমপুর কারাগারেই রয়েছেন। তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, জামিন শুনানি হতে আরও দেড় মাস সময় লাগতে পারে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়। তবে কোথাও তার জামিনের খবর পাওয়া যায়নি। জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আইভী যদি সত্যিই জামিন পেতেন, তবে তা নিশ্চিতভাবেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতো।
রিউমর স্ক্যানার লক্ষ্য করেছে, এই দাবির সঙ্গে গাঁদা ফুলের মালা পরিহিত অবস্থায় আইভীর একটি ছবি ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু ছবিটি অন্তত ২০২২ সাল থেকে (১,২) ইন্টারনেটে রয়েছে এবং এর সঙ্গে তার জামিন পাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
আইভীর পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, “তার জামিনের খবরটি ভুয়া। জামিন শুনানি দেড় মাস পরে হতে পারে। বর্তমানে তিনি কারাগারেই আছেন।”
আইভীর পক্ষের আরেক আইনজীবী, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম দেশ রূপান্তরকে জানান, “এটি স্রেফ গুজব। আইভীর মামলার শুনানী হাইকোর্টে পেন্ডিং রয়েছে। আরো দেড় মাস পরে জামিন শুনানি হতে পারে।”
দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আইভীর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় চারটি ও ফতুল্লা থানায় একটি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে তিনটি হত্যা মামলা। জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং চিফ জুডিশিয়াল আদালত ইতোমধ্যেই তার জামিন আবেদন নাকচ করেছে। পরে তার আইনজীবীরা হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন।
এছাড়া, স্থানীয় অনলাইন পোর্টাল নারায়ণগঞ্জ পোস্ট গত ৭ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আইভীর জামিনের বিষয়টি গুজব বলে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইয়ুম খান। তিনি এখনো কাশিমপুর কারাগারেই রয়েছেন।
সুতরাং, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর জামিনে মুক্তি পাওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এদিকে পলক জামিনে মুক্তি পেয়েছেন দাবিতে মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘আইভির পর একই দিনে জামিনে মুক্তি পেলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক’ শিরোনামে যমুনা টিভি কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি এবং পলক বা আইভী কেউই জামিনে মুক্তি পাননি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে গণমাধ্যমটির ডিজাইন নকল করে ভুয়া দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে যমুনা টিভির লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে। উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি দেশের অন্য গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি।
এছাড়া, পর্যবেক্ষণে আলোচিত দাবির ফটোকার্ডটির ফন্টের সাথে যমুনা টিভির প্রচলিত ফটোকার্ডের কালার এবং ফন্টের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
অর্থাৎ, যমুনা টিভির ফটোকার্ডের ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
তাছাড়া, যমুনা টিভিও এক ফেসবুক পোস্টে আলোচিত ফটোকার্ডটি ভুয়া বলে জানিয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুনাইদ আহমেদ পলক কারাগারেই রয়েছেন। প্রথম আলোর গত ২৭ আগস্টের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন আরেকটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে পলককে।
তাছাড়া, সেলিনা হায়াৎ আইভীও কারাগারেই আছেন এখনও। বিষয়টি রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
সুতরাং, ‘আইভির পর একই দিনে জামিনে মুক্তি পেলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক’ শিরোনামে যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।