ঢাকায় এক আলোচনা অনুষ্ঠানে একদল লোকের হট্টগোল আর উত্তেজনার মধ্যে সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীসহ বেশ কয়েকজনকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে তাদেরকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানকার শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শিরোনামে গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে মঞ্চ ৭১। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল গণফোরামের সাবেক সভাপতি কামাল হোসেনের।
সেখানে ‘জুলাইযোদ্ধা’ পরিচয়ে আল আমিন রাসেলের নেতৃত্বে কয়েকজন গিয়ে উপস্থিত লোকজনদের ঘেরাও করেন। সেগুনবাগিচা ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদেরও সেখানে দেখা যায়।
পরে পুলিশ গিয়ে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায়।
অনুষ্ঠানে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বলেন, “আমি এখানে প্রোগ্রামে এসেছি। দল মতের হিসাবে নয়, এখানে সব মুক্তিযোদ্ধাদের ডাকা হয়েছে; তাই এসেছি।
“আমরা প্রোগ্রাম শুরু করেছিলাম। লতিফ সিদ্দিকী সাহেব এসেছেন। কামাল হোসেন সাহেব আসেননি। ২০/২৫ জন ছেলে এসে হট্টগোল করে। আমাদের ঘিরে ফেলে।”
লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে যাওয়ার সময় শাহবাগ থানার এসআই রাশেদ বলেন, “এখন তো এখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। আমরা নিয়ে যাচ্ছি। পরে সিনিয়ররা সিদ্ধান্ত নেবেন।”
শাহবাগ থানার ওসি মো. খালিদ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না, এডিসি স্যার উপস্থিত ছিলেন। আমার জানা মতে, ৬/৭ জনকে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়েছে।”
অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মিলনায়তনের একটি টেবিল ভাঙা। কয়েকজন অংশগ্রহণকারী আছেন। বেশ কিছু লোক হৈ-হুল্লোড় করছেন।
জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লতিফ সিদ্দিকীসহ কয়েকজনকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে; মূলত উনাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এখন সিনিয়রদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।”
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে পান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্ব।
পরে যুক্তরাষ্ট্রে সফরে গিয়ে ঘরোয়া এক আলোচনায় হজ নিয়ে মন্তব্যের জেরে মন্ত্রিসভা ও দল থেকে বহিষ্কার হন। এরপর সংসদ থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৪ আসনে হারলেও ২০২৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েই নৌকাকে হারিয়ে দেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষার দাবিতে ‘মঞ্চ ৭১’ নামে গত ৫ অগাস্ট নতুন প্লাটফর্মে আত্মপ্রকাশ ঘটে। মুক্তিযোদ্ধা, নতুন প্রজন্ম ও ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত এ প্লাটফর্মের সমন্বয় করছেন গণফোরামের নেতা বীরপ্রতীক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না।
অনুষ্ঠানস্থলে কেশব রঞ্জব সরকার নামের একজন মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর রিপোর্টাস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মারধরের শিকার হয়েছেন জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর টকমকে বলরন, “উনাকে বিএনপির লোকজন মারধর করেছে, পরে শাহবাগ থানার দিকে নিয়ে গেছে।”
উত্তেজনার সময় আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অবস্থান করছিলেন। দুপুর পৌনে দুইটার দিকে বের হয়ে যাওয়ার সময় তোপখানা রোডের বৈশাখী হোটেলের সামনে পথরোধ করে স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী।