মসজিদ আল-হারামে কোন পাখি অপরিষ্কার করে না কেন? অলৌকিক ঘটনা!

মক্কার পবিত্র মসজিদ আল-হারামের আঙ্গিনায় প্রায়শই কবুতরের ঝাঁককে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এরা হজ এবং ওমরাহযাত্রীদের ডানা ঝাপটিয়ে স্বাগত জানায়। পাখিগুলো অনেক নামে পরিচিত। আল-হারাম বা স্যাঙ্কচুয়ারী পায়রা, ফিভার পায়রা এবং শান্ত পায়রা ইত্যাদি নামে এদের পরিচিতি রয়েছে।

মসজিদ আল-হারামের কবুতররা বিশেষ পবিত্রতার কারণে কাবা বা এর আশেপাশে মলত্যাগ করে না। এই কবুতরগুলোও বিশেষ মর্যাদা এবং সুরক্ষা উপভোগ করে আসছে। পবিত্র কাবার মেহমানদের স্বাগত জানিয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে।

‘আল-হারাম কবুতর’ নামে পরিচিত এই পাখিগুলি শহরের একটি বিখ্যাত নিদর্শন বহন করে। প্রায়শই এদের হজযাত্রীদের কাছাকাছি ভিড়তে দেখা যায়। এই নির্দিষ্ট কবুতরগুলি সাধারণত পবিত্র কাবা বা এর আশেপাশে মলত্যাগ করে না। হজ ও ওমরাহযাত্রীরা সবসময় এদের প্রশংসা করেন। মসজিদের উঠোনে নিজ হাতে খাওয়ান এবং এদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন।

পবিত্র কবুতরগুলি ইসলামে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। তীর্থযাত্রী বা অতীর্থযাত্রী কারোর জন্যই এদের হত্যা করা জায়েজ নয়। মুসলিম আইনবিদরা পাখিদের ফিরিয়ে দেওয়া, ডিম ভাঙা বা তারা যেখানে বাসা বাঁধে সেখান থেকে বের করে দেওয়াও নিষিদ্ধ করেছেন।

আরও পড়ুনঃ মৃত্যুর পর ভাই-বোনের আর দেখা হবে না, ইসলাম কি বলে?
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল- কবুতর এবং পবিত্র স্থানটির দর্শনার্থীদের মধ্যে সুরেলা এবং অনন্য সম্পর্ক নজর কাড়ার মত। কবুতর এবং দর্শনার্থীদের মধ্যে এই প্রেমময় সম্পর্ক শত শত বছর আগের।

কাবা এবং মসজিদ আল-হারামের এলাকাটি ইসলামের একটি পবিত্রতম স্থান। ‘হারাম কবুতর’ নামে পরিচিত কবুতরগুলিকে বিশেষ এবং সুরক্ষিত হিসেবে দেখা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, পবিত্র স্থানকে নোংরা না করার জন্য তাদের ঐশ্বরিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই এলাকার কবুতরগুলি একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির এবং কিছু সূত্র অনুসারে এদের অভ্যাস অন্যান্য পাখির চেয়ে আলাদা হতে পারে। তথাপি যেসব পাখির মাংস হালাল (অনুমোদিত) বলে বিবেচিত হয় তার বিষ্ঠাও কিছু ইসলামী চিন্তাধারায় বিশুদ্ধ বলে বিবেচিত হয়। যার অর্থ এদের উপস্থিতি ধর্মীয় অপবিত্রতার কারণ হিসাবে বিবেচিত হয় না।

মক্কার ইতিহাসের বিশেষজ্ঞ গবেষক সামির আহমেদ বারকাহ বলেন, “গ্র্যান্ড মসজিদের কবুতরদেরকে ফিভার পায়রা বলা হয় কারণ তারা আল্লাহর নিরাপদ আশ্রয়স্থলের চারপাশে ঘোরাফেরা করে। মক্কায় নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে এই কবুতরগুলি অনেক বেশি আশ্বস্ত। এজন্য এদের আশ্রয়স্থল পায়রাও বলা হয়।’’

আরও পড়ুনঃ ২০২৬ সালে রমজান শুরু হতে পারে যে তারিখে
তিনি বলেন, গ্র্যান্ড মসজিদের কবুতরের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্বের অন্যান্য ধরণের কবুতর এবং অন্যান্য পাখির থেকে আলাদা। এই বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে এদের সুন্দর আকৃতি, অনন্য রঙ, টানা চোখ এবং লম্বা ঘাড়।এলাকা যতই জনাকীর্ণ হোক না কেন, কবুতর দর্শনার্থীদের ভয় পায় না।

স্যাঙ্কচুয়ারী পায়রা কাবা বা এর আশেপাশে মলত্যাগ করে না। এরা তীর্থযাত্রী এবং তত্ত্বাবধায়ক উভয়ের কাছ থেকে আরও প্রশংসা অর্জন করে। পাখিগুলি মক্কার সবচেয়ে বিখ্যাত নিদর্শনগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে এবং সর্বদা দর্শনার্থীদের উপর দিয়ে উড়তে দেখা যায় অথবা ভবনের পাশে দাঁড়িয়ে সদয় মানুষদের খুঁজতে দেখা যায় যারা তাদের কিছু খেতে দিতে পারে।

বারকাহ আরও বলেন, “কেউ কেউ পবিত্র এসব কবুতরের উৎপত্তিস্থল খুঁজে পেয়েছেন। এদের পূর্বসূরিরা নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের সময় সাওর পাহাড়ের গুহায় বাসা স্থাপন করেছিল। পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ তায়ালা এই কবুতরগুলি এবং এদের বংশধরদের মক্কায় নিরাপদে বসবাসের সুযোগ দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন।”

আরও পড়ুনঃ বাকিতে কোরবানির পশু কেনা যাবে?
ঐতিহাসিক শেখ মোহাম্মদ তাহির আল-কুরদি বলেন, পবিত্র কবুতরগুলি আবাবিল পাখির বংশধরদের সাথে সম্পর্কিত, যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা আবরাহা আল-আশরামের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীকে ধ্বংস এবং বহিষ্কার করার জন্য প্রেরণ করেছিলেন।সেনাবাহিনী কাবা ঘর ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা পাখির ঝাঁক পাঠিয়েছিলেন যারা তাদের উপর ছোট ছোট পাথর ছুঁড়েছিল, অবশেষে তাদের ধ্বংস করে মক্কা থেকে বহিষ্কার করেছিল।

“কিছু লোক বিশ্বাস করেন যে, পবিত্র কবুতরগুলি নূহের জাহাজে থাকা দুটি কবুতরের বংশধর। তবুও, এই বিশ্বাসগুলি ইতিহাসের বইগুলিতে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এগুলি খতিয়ে দেখা দরকার।”

বারকাহ বলেন, “কেউ কেউ বলে যে পবিত্র কবুতরগুলি আকাশে শান্তিতে উড়ে বেড়ায় যতক্ষণ না তারা স্থলে মারা যায়, পৃথিবীর কোনও শক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে এদের ক্ষতি করার সাহস করে না। তবে কেবল রোগের কারণে মারা যাওয়া ভিন্ন কথা, যদিও তা এখনও ঘটেনি।”

সূত্র: আরব নিউজ