কিডনি জটিলতা- ওয়াইফ প্র‍্যাগনেন্ট জামিন পেতে যত ‘বাহানা’ তৌহিদ আফ্রিদির

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর ছেলে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক তার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন বেলা ২ টা ২৫ মিনিটে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। এসময় তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।

এরপর বেলা ৩ টা ২৬ মিনিটে কড়া নিরাপত্তায় এজলাসে তোলা হয় তাকে। এসময় এজলাসে হট্টগোল শুরু হয়। জনাকীর্ণ এজলাসে হট্টগোলের মধ্যেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট খায়রুল ইসলাম আফ্রিদির রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন।

তিনি আদালতকে জানান, মামলার ঘটনার সাথে আসামির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। বাদীর অভিযোগ আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ভিক্টিম নিহত হন। এখানে আসামির কোন ভূমিকা নেই। গত বছরের ১১ নভেম্বর এ মামলার বাদী এভিডেভিড দিয়ে বলছে তথ্যগত ভূলের কারণে তার নাম যোগ হয়েছে। তাকে এ মামলায় খালাস দিলে বাদীর কোন আপত্তি নেই। এ কারনে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। আমরা রিমান্ড বাতিলের আবেদন করছি।

শুনানিতে এই আইনজীবী আরও বলেন, আফ্রিদি কিডনি জটিলতায় ভুগছেন, তার চিকিৎসা চলমান। অতিরিক্ত হাটাচলায় তার প্রস্রাবে ব্লাড আসে। এছাড়া তার ওয়াইফ (স্ত্রী) প্র‍্যাগনেন্ট। মানবিক বিবেচনায় তার জামিন মঞ্জুর করা হোক।

রাষ্ট্রপক্ষে বাদীর আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল ও ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে তারা বলেন, এই আসামি মামলায় এজাহারভুক্ত।

তাকে মিডিয়া সন্ত্রাসী দাবি করে বলেন, এই আসামি লাইভে এসে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের ওপর নারকীয় হত্যাকাণ্ড করতে উৎসাহিত করেন। তাকে রিমান্ডে নিলে জানা যাবে কারা এ হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত, কার কি নির্দেশনা ছিল। কারা অর্থদাতা ও অস্ত্রদাতা। এই আসামি ডিবির হারুনের সাথে একাধিক লাইভ করেছেন।

এসময় তারা আফ্রিদির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থণা করেন। কাঠগড়ার লোহার রেলিংয়ে হাত দিয়ে মনযোগ দিয়ে শুনানি শুনেন আফ্রিদি। মাঝে মাঝে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিরুদ্ধে মাথা নেরে প্রতিবাদ জানান।

পরে আসামি পক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন আফ্রিদি।আন্দোলনের সময় ছাত্রদের পক্ষে তার একাধিক পোস্ট আছে। এসময় এজলাসে ফের হট্টগোল শুরু হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবী খালেদা জিয়ার সাথে আফ্রিদির বাবা নাসির উদ্দিন সাথীর ছবি দেখিয়ে বলেন, আসামির আলাদা রাজনৈতিক কোন পরিচয় নেই। তার বাবা ব্যবসায়ী। কোন রাজনৈতিক দলের পদ-পদবী নেই।

আফ্রিদির কিডনিতে জটিলতা আছে জানিয়ে তাকে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের কাছে এম্বুলেন্স সুবিধা চাওয়া হয়। এরপর আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। শুনানি শেষে এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে আফ্রিদিকে পেটে হাত দিয়ে খুড়িয়ে হাটতে দেখা যায়।

বেসরকারি টেলিভিশন মাই টিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন সাথীর ছেলে তৌহিদ আফ্রিদিকে রোববার রাতে সিআাইডির একটি দল বরিশাল থেকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে আফ্রিদির বাবা নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন এ মামলায় তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন আসাদুল। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ অগাস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় আসামির তালিকায় নাসির উদ্দিন ও তৌহিদ আফ্রিদির নামও রয়েছে। এর আগে ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন ১৮ আগস্ট এ মামলায় তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে গত ২৩ আগস্ট তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।