হাসিনার পতনে রুমিন ফারহানা সম্ভবত দুঃখ পেয়েছেন

নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণের শুনানি চলাকালে হাতাহাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আতাউল্লাহ। আতাউল্লাহর অভিযোগ, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের সামনেই রুমিন ফারহানার ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ তার ওপর হামলা চালিয়েছে।

এই ঘটনা নিয়ে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “রুমিন ফারহানা আঙ্গুল নাড়িয়ে হামলার নির্দেশ দিচ্ছেন আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার গালে হাত দিয়ে বসে বসে দেখছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী শুনানিতে এলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্ভবত স্যালুট দিয়ে বসবেন!”

অপর এক পোস্টে তুষার বলেন, ‘‘রুমিন ফারহানা ইসির সামনে অপেক্ষমান মিডিয়াকে বলেছেন, উনি ইসিতে ‘ভদ্রলোক’ নিয়ে গেছেন। গুণ্ডা লাগলে গুণ্ডা নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতাও তার আছে।

দেখলাম উনার ‘ভদ্রলোকেরা’ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উপস্থিতিতে এনসিপি নেতা আতাউল্লাহর ওপর হামলা করেছে। উনি গুন্ডা নিয়ে আসলে না জানি তারা কি করত!

“যেটা গত পনেরো বছরে হয় নাই” — রুমিন ফারহানার প্রিয় রেফারেন্স। কিছু হলেই তিনি টকশোতে বলেন পনেরো বছরে অমুক জিনিসটা হয় নাই, এখন হচ্ছে। ইসিতে গিয়েও একই কথা বলেন। এই কথার আরেক মানে কী? শেখ হাসিনা অত খারাপ ছিলেন না।

সম্ভবত হাসিনা পতনে রুমিন ফারহানা গভীর দুঃখ পেয়েছেন। পাওয়ারই কথা। আগে তো প্লট পাওয়া যেত, এখন কেউ প্লট দেয় না।

ইসির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উপস্থিতিতে এই তাণ্ডব! সারা দেশের কথা বলাই বাহুল্য! তবু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা তোলা মানেই “নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র!”

এ ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আতাউল্লাহ নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্তে বিজয়নগর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সংযুক্ত করা হলে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়। তাদের অনুরোধে তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপত্তি দাখিল করেন। এরপর থেকেই বিএনপি নেতা রুমিন ফারহানার ক্যাডাররা তাকে শুনানিতে অংশ না নেওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল।

আতাউল্লাহ অভিযোগ করেন, রোববার (২৪ আগস্ট) নির্ধারিত শুনানিতে অংশ নিতে তিনি ও তার এলাকার প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনে এলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রথমে তাদের প্রবেশে বাধা দেন। পরবর্তীতে তিনি কোনোমতে শুনানির ঠিক আগ মুহূর্তে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের উপস্থিতিতেই রুমিন ফারহানার ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ তাদের ওপর হামলা চালায়। আতাউল্লাহ এই ঘটনাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ‘কলঙ্কিত অধ্যায়’ বলে অভিহিত করেন।

অভিযোগপত্রে আতাউল্লাহ আরও বলেন, “স্বৈরাচারী হাসিনার শাসনামলেও নির্বাচন কমিশনের সামনে কেউ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে এমন নজির নেই। এর মাধ্যমে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতাও প্রমাণিত হলো, এবং একটি জাতীয় নির্বাচনে আপনারা কী ভূমিকা পালন করতে পারবেন তার একটি পরীক্ষা হয়ে গেল।” তিনি দাবি করেন, ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হামলা চলার সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনাররা নির্বিকারভাবে মঞ্চে বসেছিলেন।

অভিযোগপত্রে আতাউল্লাহ বলেন, “প্রায় দুই হাজার শহীদ ও ৩০ হাজার আহত যোদ্ধার অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি, যা হবে ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন এবং গণতান্ত্রিক। অথচ আজকে বিএনপি নেতা রুমিন ফারহানার কর্মকাণ্ড এবং আপনাদের অবস্থান হাসিনার শাসনামলকেও হার মানিয়েছে। এটা শহীদদের রক্তের সঙ্গে প্রতারণা।”

আতাউল্লাহ ফ্যাসিবাদী কালো আইনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি অবিলম্বে রুমিন ফারহানাসহ তার বাহিনীকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। একইসাথে তিনি কমিশনকে সত্যিকারের জনগণের একটি কমিশন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, যদি কমিশন নিরপেক্ষ থাকতে না পারে, তাহলে তাদের পদত্যাগ করে যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া উচিত।