জেনে নিন বর্তমানে কোন কোন ব্যাংকে টাকা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সম্প্রতি দেশের ক্ষুদ্র ও বড় সব আমানতকারীকে আশ্বস্ত করেছেন যে তাদের টাকা নিরাপদ এবং “কারো টাকা মার যাবে না।” তবে গভর্নরের আশ্বাস সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে এখনও আস্থা তৈরি হয়নি। সাধারণ মানুষ নানা ব্যাংকে আমানত রাখার বিষয়ে দ্বিধান্বিত। অনেকেই ফোন করছেন কোন ব্যাংকে টাকা রাখবেন, কোন ব্যাংকে নয় তা নিয়ে পরামর্শ চাইতে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করাচ্ছেন, দেশের ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতি এমন হওয়ার কথা ছিল না। বিগত সরকারের সময়ে কিছু ব্যাংক খালি করে ফেলা হয়েছে এবং সরকারি সহযোগিতায় লুটপাট চালানো হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে গেছে। এমনকি কিছু ব্যাংকের অফিসার ৫ হাজার টাকা দেওয়ার সামর্থ্যও হারিয়েছিলেন।

গভর্নর উল্লেখ করেছেন যে কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে মোট ঋণদানের ক্ষমতার ৮৭% ঋণ শুধু একটি পরিবারের কাছে দেওয়া হয়েছে। এটি ব্যাংকিং নর্মসের বিরুদ্ধ এবং দেশের আর্থিক খাতের জন্য বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এই কারণে বহু আমানতকারী এখনও টাকা ফেরত পেতে পারেননি। লিজিং কোম্পানিতেও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যা কিছুটা সহায়ক। দেশের মুদ্রাস্ফীতি এখন প্রায় ৮% এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। তবে, ব্যাংকগুলোর উচ্চ এডি রেশিও (Asset to Deposit Ratio) এবং ডিফল্ট ঋণের কারণে সাধারণ মানুষ এখনও ব্যাংকে টাকা রাখতে দ্বিধান্বিত।

বর্তমানে সাতটি ব্যাংকের এডিআর সীমা ১০০% ছাড়িয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে:

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (১৩৬%),

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (১২৪%),

ইউনিয়ন ব্যাংক (১১৯%),

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক,

ইসলামী ব্যাংক,

এক্সিম ব্যাংক,

ন্যাশনাল ব্যাংক।

পুরনো তথ্য অনুযায়ী, এডিআর সীমা লঙ্ঘনের কারণে এবি ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক এবং রূপালী ব্যাংক রেড জোনে ছিল। বিশেষ করে পদ্মা ব্যাংক সরকারি অনেক আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া আইসিবি ইসলামী ব্যাংকও বহু আমানতকারীকে ফেরত দিতে পারেনি।

লিজিং কোম্পানির ক্ষেত্রেও ঝুঁকি প্রবল। উদাহরণস্বরূপ, বিআইএফসি-র প্রায় ৯৬% ঋণ ডিফল্ট অবস্থায় রয়েছে। ব্যাংকগুলোর পরিচালন ঝুঁকি এতটাই বড় যে তারা সঠিকভাবে ঋণ বিতরণ করতে পারছে না।

যদিও ১১টি ব্যাংকে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক ছেপে দিয়েছে, এর প্রভাব সীমিত। কিছু ব্যাংক সংকট থেকে বেরিয়ে আসলেও বেশিরভাগ ব্যাংক এখনও ঝুঁকির মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, যে কেউ ব্যাংকে টাকা রাখতে চাইলে প্রথমে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা, এডি রেশিও, ডিফল্ট ঋণ এবং পরিচালন ঝুঁকি যাচাই করুন।

এই পরিস্থিতিতে আমানতকারীদের নিজের বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করাই সবচেয়ে নিরাপদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের আশ্বাস সত্ত্বেও টাকা রাখার আগে সতর্ক হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।