রাজধানীর কলাবাগানে স্ত্রীকে হত্যা করে মরদেহ ডিপ ফ্রিজে রেখে পালিয়ে যাওয়া নজরুল ইসলামকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। স্ত্রী তাসলিমা আক্তারকে নৃশংসভাবে হত্যার এ ঘটনায় এলাকায় চরম চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) কলাবাগান থানায় নিহত তাসলিমার পরিবার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। এরপর কলাবাগান থানার পুলিশ বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাতেই অভিযুক্ত স্বামী নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।
গাজীপুরে স্ত্রী- সন্তানকে হত্যা*র পর স্বামীর আত্মহ*ত্যা
ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “মামলাটি রুজুর পর সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় কলাবাগান থানা পুলিশ ভুক্তভোগীর স্বামী মো. নজরুল ইসলামের অবস্থান শনাক্ত করে। পরবর্তীতে মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ৯টা ১০ মিনিটে বংশাল থানাধীন নবাবপুর রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় তার নিজ বাসার ওয়্যারড্রোব থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা উদ্ধার করা হয়।”
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে নজরুল। ডিসি তালেবুর রহমান জানান, “নজরুল ইসলাম ও তাসলিমা আক্তার দম্পতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলছিল। নজরুল ইসলাম অবৈধ সম্পর্কের সন্দেহে স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো। এমনকি সে ভয় পেত যে স্ত্রী তার সম্পত্তি ও ব্যাংকে রাখা অর্থ হাতিয়ে নেবে। এই চরম সন্দেহ ও নিয়ন্ত্রণের মানসিকতা থেকেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলমের সংবাদ সম্মেলনে।
পুলিশের তথ্যমতে, নিহত দম্পতির দুই মেয়ে—একজনের বয়স ১৭, অন্যজনের ১৪ বছর। ঘটনার রাতে দুই মেয়ে নিজ নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। পরদিন সকালে নজরুল তাদের বলে, “তোমাদের মা অন্য কারও সঙ্গে চলে গেছে।” এরপর দুই মেয়েকে বোনের বাসায় রেখে আসে সে। পরে মেয়েরা মাকে ও বাবাকে ফোনে না পেয়ে সন্দেহে মামাদের জানায়। পরিবারের সদস্যরা পুলিশে খবর দিলে সোমবার সন্ধ্যায় কলাবাগানের বাসায় গিয়ে ফ্রিজের ভেতর থেকে তাসলিমার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, নজরুল একসময় কাপড়ের ব্যবসা করলেও বর্তমানে কোনো কাজ করছিল না। আগে তার আদাবরে বাড়ি ছিল, যা বিক্রির পর ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের লাভ দিয়ে সংসার চালাতেন। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, দাম্পত্য কলহের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
তবে নিহত তাসলিমার পরিবারের দাবি ভিন্ন। তাদের অভিযোগ, নজরুল তার শ্বশুরের কাছে ১০ কাঠা জমি দাবি করেছিলেন। শ্বশুর রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি স্ত্রীকে হত্যা করেন।
